জন্ম গুজরাতেই, তবুও বাংলাভাষী হাসান শাহকে তুলে বাংলাদেশের চরে ছেড়ে এল শাহের বিএসএফ!
আনন্দবাজার | ১১ জুলাই ২০২৫
জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও হাসান শাহ নামে এক যুবককে জোর করে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফ এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গুজরাতের বস্তি থেকে জোর করে তুলে হাত-পা বেঁধে নৌকায় চাপিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনের চরে ছেড়ে দিয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী!
অভিযোগ, মে মাসের গোড়ায় ৭৮ জনকে নৌকায় চাপিয়ে সাতক্ষীরার বঙ্গোপসাগর লাগোয়া মান্দারবাড়িয়া চরে ছেড়ে এসেছিল বিএসএফ এবং উপকূলরক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ সরকার সে সময়ই দাবি তুলেছিল, হাসান-সহ সেই দলে তিন জন জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদককে হাসান জানিয়েছেন, গুজরাতের সুরাতের একটি বস্তিতে স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি। এপ্রিলের শেষপর্বে হঠাৎই সেখানে হানা দিয়েছিল গুজরাত পুলিশের একটি দল। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে, হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করা হয় তাঁকে। তার আগে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের যাবতীয় নথিপত্র!
হাসানের দাবি, প্রাথমিক ভাবে কয়েক দিন আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তার পরে অন্য ‘বন্দিদের’ সঙ্গে তুলে দেওয়া হয়েছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি জলযানে! কয়েক দিন পরে সেই জলযান বঙ্গোপসাগরের ওই চরের বেশ কিছুটা দূরে পৌঁছোয়। এর পরে তাঁদের ‘লাইফ জ্যাকেট’ পরিয়ে রাইফেল উঁচিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়, সমুদ্রে ঝাঁপ মেরে সাঁতরে চরে যেতে! হাসান বলেন, ‘‘পরে ওই চর থেকে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষীরা আমাদের উদ্ধার করে।’’ এর পরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানা তাঁদের আটক করে আদালতে পেশ করে। বিচারকের নির্দেশে পাঠানো হয় বিচারবিভাগীয় হেফাজতে।
হাসান জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ভারতীয় সচিত্র পরিচয়পত্র, আধার এবং বিবাহের শংসাপত্র রয়েছে। তিনি আদতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশ গত মে মাসে দাবি করেছিল, হাসানের বাবা প্রয়াত মুন্না শাহ নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেই বিভিন্ন রাজ্যে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সে সময় গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাঙভি প্রকাশ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের একটি সূত্র বলছে, ৭ মে থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে ১,৮৮০ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে।