নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঙালি হলেই পুশব্যাক? বাংলার ছয় পরিযায়ী শ্রমিককে কি বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে শুক্রবার এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন বাংলার শ্রমিকরা। তাঁদের আটক করে বাংলাদেশে পাঠানোর গুরুতর অভিযোগে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ। আর সে কারণেই উচ্চ আদালত শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট তলবেই ক্ষান্ত হয়নি। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে অবিলম্বে এব্যাপারে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যসচিবকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী বুধবার কলকাতা মামলার পরবর্তী শুনানি।
পশ্চিমবঙ্গের ছ’জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে আটক করা হয়েছিল। অভিযোগ, তারপর বিএসএফের মাধ্যমে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বীরভূমের পাইকর গ্রামের বাসিন্দা ওই শ্রমিকদের পরিবার। এদিন বিচারপতি চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে ছিল সেই মামলার শুনানি। সেখানে মামলাকারীর আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী জানান, একটি পরিবারে বাবা-মায়ের সঙ্গে আট বছরের শিশুকেও দিল্লিতে আটক করা হয়। তারপর বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে তিনজনকে। সেই বক্তব্যকে কার্যত সমর্থন করেন রাজ্যের আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক। বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এখনও তার উত্তর আসেনি।’
মামলাকারী ও রাজ্যের বক্তব্য শোনার পর এজলাসে উপস্থিত কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীকে বিচারপতি চক্রবর্তী বলেন, ‘এর আগে ওড়িশায় হওয়া এমন একটি ঘটনায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি। মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্ট। তাই মামলায় কোনও রুল জারির আগে আমরা অপরপক্ষের বক্তব্য শুনতে চাই।’ এরপরই নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বাংলার ওই শ্রমিকদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে কি না, তার জবাব দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মুখ্যসচিবকে দিল্লির সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করে রিপোর্ট দিতে হবে।
যদিও ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকদের আটকের সঙ্গে এই মামলার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, ওড়িশার ক্ষেত্রে কাউকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে নাগরিকত্বের নথি থাকা সত্ত্বেও ওই ছ’জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মূলত এই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট।
বিজেপি শাসিত ওড়িশায় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের ৪৪৪ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। ইতিমধ্যেই নথি যাচাইয়ের পর ৩০২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। ওড়িশা পুলিসের দাবি, এখনও ১৪২ জনের নথি যাচাই পর্ব চলছে। তা সম্পন্ন হলেই তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। ওড়িশায় বাংলার শ্রমিকদের হেনস্তা নিয়ে আগেই সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের দাবি, ‘ঝাড়সুগুদা শেল্টার হোমে নিয়ে গিয়ে শ্রমিকদের মোবাইল কেড়ে নিয়েছে পুলিস, যাতে তাঁরা পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে না পারেন।’ প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।