বরাদ্দ শুধু ডাবল ইঞ্জিনেই, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় ব্রাত্য বাংলা সহ সব বিরোধী রাজ্য
বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৫
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: ২০২৫-২৬ বাজেটে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার চতুর্থ পর্যায় (পিএমজিএসওয়াই-৪) চালুর প্রস্তাব পেশ করে ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রতিটি রাজ্যেরই আশা ছিল, নতুন রাস্তা হবে। প্রায় ৪ হাজার জনবসতিকে রাস্তা দিয়ে যুক্ত করার জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়ে রেখেছিল পশ্চিমবঙ্গও। তবে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক চিঠি বুঝিয়ে দিল, বঞ্চনা এবারও সঙ্গী হবে। তবে শুধু বাংলা নয়, বিজেপি বিরোধী কোনও রাজ্যই এবার পাচ্ছে না পিএমজিএসওয়াই-৪’এর টাকা। বরাদ্দ কোথায় হল? স্রেফ ডাবল ইঞ্জিন এবং এনডিএ সরকারের প্রাণভোমরা শরিক রাজ্যে। অসম, ছত্তিসগড়, ওড়িশা, রাজস্থান এবং অবশ্যই চন্দ্রবাবু নাইডুর অন্ধ্রপ্রদেশ। কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, এই খাতে অন্ধ্রপ্রদেশ ৪০০ কোটি, অসম ৬০০ কোটি, ছত্তিসগড় ৭৫০ কোটি, ওড়িশা ৫০০ কোটি এবং রাজস্থান ৮০০ কোটি টাকা পাবে।
যে কোনও প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়ার আগে এগজিকিউটিভ কমিটির (ইসি) বৈঠক করতে হয়। এক্ষেত্রে এখনও কোনও ইসি বৈঠকের খবর মেলেনি। কিন্তু ‘কৌশলে’ প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে প্রাপক রাজ্যের নাম। কারণ চিঠিতে বলা হয়েছে, এই পাঁচ রাজ্যের জন্য ‘টেন্টেটিভ ইন্ডিকেটিভ অ্যলকেশন’ করা হল। অর্থাৎ, পিএমজিএসওয়াই-৪’এর টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই রাজ্যগুলিই সম্ভাব্য প্রাপক—সেটা স্পষ্ট করে রাখল মোদি সরকার। অভিজ্ঞ আমলাদের মতে, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। প্রশাসনিক নিয়মের পরিপন্থী। কারণ কীসের ভিত্তিতে এই রাজ্যগুলিকে ‘সম্ভাব্য প্রাপক’ হিসেবে ধরা হয়েছে, তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি কেন্দ্র। আর যদি ধরে নেওয়া হয়, আগে যে রাজ্যগুলির বরাদ্দের হার কম ছিল, তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? তাহলেও কিন্তু বহু বিরোধী রাজ্যের নাম ডাবল ইঞ্জিনের আগে আসবে। বিরোধীদের দাবি, গেরুয়া রাজনৈতিক চাপ ছাড়া এই সিদ্ধান্ত হতে পারে না। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এটা আঘাত ছাড়া কিছু নয়। ফের পরিষ্কার হল, কেন্দ্র মানুষের কথা ভাবে না। শুধু ভোটব্যাঙ্ক ভাবে। এর উত্তর আমাদের দিতে হবে না। এর জবাব সাধারণ মানুষ দেবে।’
এর আগের পর্যায়, অর্থাৎ পিএমজিএসওয়াই-৩’এর অধীনে বাংলাকে ৬ হাজার ২৮৭ কিমি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। তবে অনুমোদন মিলেছে মাত্র ৩ হাজার ৩৭৯ কিমির। ফলে বাকি ২ হাজার ৪৪ কিমির কাজের বরাদ্দ কবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে রাজ্য। আবার অনুমোদিত কাজের জন্য বাংলাকে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও, এখনও পর্যন্ত মিলেছে কত? মাত্র ২২০ কোটি। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ এবং ১৫ জুলাই নয়া দিল্লিতে বসছে প্রজেক্ট রিভিউ কমিটির বৈঠক। সেখানে রাজ্যের তরফে বাংলার বিরুদ্ধে একাধিক বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হবে বলেও জানা গিয়েছে।