• বাড়িতে মৃত বাবাকে রেখে রোগী দেখতে গেলেন চুঁচুড়ার চিকিৎসক
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: উপন্যাসের কাহিনি কখনও কখনও বাস্তব হয়ে ওঠে জীবনে। তেমনই এক কাণ্ড ঘটালেন চুঁচুড়ার ইমামবাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে প্রয়াত হয়েছেন তাঁর বাবা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। কিন্তু প্রতিদিনের মতো এদিন সকালেও তাঁর চেম্বারে ভিড় করেছিলেন বহু রোগী। তাঁদের অনেকে আবার এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে। সকাল থেকেই ছিল বৃষ্টির দাপট। এমন দিনেও যাঁরা চিকিৎসার জন্য ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের ফেরাননি শিবাশিসবাবু! বাবার মরদেহ ঘরে রেখেই রোগী দেখতে ঢুকে পড়েন চেম্বারে। রোগী দেখার পর্ব মিটিয়েই তিনি বাবার শেষকৃত্যের কাজে নামেন।

    ঠিক এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল খ্যাতনামা সাহিত্যিক বনফুলের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘অগ্নীশ্বর’-এ। আরও কয়েকটি সমাপতন রয়েছে। বনফুল, তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অগ্নীশ্বর এবং শিবাশিসবাবু—তিনজনেই চিকিৎসক। অনেকে মনে করেন, নিজের চিকিৎসক শিক্ষক বনবিহারী মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করেই অগ্নীশ্বরের চরিত্র গড়েছিলেন বনফুল। সেই বনবিহারীবাবু হুগলির গরলগাছার বাসিন্দা ছিলেন। আর বনফুলের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল চণ্ডীতলার শিয়াখালা।

    শিবাশিসবাবুর কর্মকাণ্ডের কথা এদিন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তারপরেই নানা মহল থেকে প্রশংসার বন্যা বয়ে গিয়েছে। চিকিৎসককে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলার ইন্দ্রজিৎ দত্ত (বটা)। তিনি বলেন, ‘শিবাশিসবাবু শুধুই চিকিৎসক নন, বরাবর মানবিক। রাত ৩টেও ওঁকে ডাকলে না করেন না। তিনি যা করেছেন, তাতে ওঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।’ রোগীদের অনেকেই এদিন সকালে বোঝেননি যে চিকিৎসকের বাড়িতে ঠিক কী হয়েছে। শুভজিৎ সাহা নামে এক রোগী বলেন, ‘ওষুধ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম, ডাক্তারবাবুর বাবা প্রয়াত হয়েছেন। ভাবতেও অবাক লাগছে।’ এসব প্রশংসা অবশ্য গায়ে মাখছেন না শিবাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা অসুখ নিয়ে বৃষ্টি মাথায় এসেছেন। তাঁদের ফেরাই কী করে!
  • Link to this news (বর্তমান)