চুঁচুড়া জনজোয়ার, সায়নী ঘোষের নেতৃত্বে ২১শের প্রচারে হাজার হাজার মানুষের মিছিল ...
আজকাল | ১২ জুলাই ২০২৫
মিল্টন সেন,হুগলি: হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে ২১ শে জুলাইয়ের সমর্থনে মহা মিছিল এবং জন জনসভা। জেলা সদর চুঁচুড়ায় আয়োজিত কর্মসূচির প্রধান আকর্ষণ ছিলেন যুব তৃণমূল সভানেত্রী সংসদ সায়নী ঘোষ। শুক্রবার চুঁচুড়া খাদিনা মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় ঘড়ির মোড়ে।
মিছিলে পা মেলান রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। ছিলেন বিধায়ক অরিন্দম গুইন, অসিত মজুমদার, তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র, হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধারা, হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী প্রিয়াঙ্কা অধিকারী। মিছিল শেষে ঘড়ির মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা।
এদিনের সভায় সায়নী ঘোষ বলেন, "মানুষের জন্য সর্বদা কাজ করে চলেছেন রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রীর মমতা ব্যানার্জি। লক্ষীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মত জনদরদী প্রকল্প বাংলায় চালু করেছেন তিনিই। তাই আগামী দিনে মানুষ মমতা দির পাশেই থাকবে। এই দিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে জনসভায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।"
২১ জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে গত পরশু তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক সমাবেশকে সফল করতে হুগলি জেলার কোন্নগরে অনুষ্ঠিত হল বিশাল মিছিল ও জনসমাবেশ। হুগলি জেলা আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক।
৩২ বছর আগে কী ঘটেছিল ২১ জুলাই? কেন চলেছিল গুলি? ফিরে দেখা রক্তাক্ত দিন
৯১৩২ সালের ২১ জুলাই, মমতা ব্যানার্জির ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই ধর্মতলা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই ঘা এখনও দগদগে। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। মমতা ব্যানার্জি তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে শহরে বিভিন্ন স্থানে ছবি সহ হোর্ডিং দিয়েছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য আজকের জেনারেশনকে একুশের গুরুত্ব বোঝানো। নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জির লড়াইয়ের ইতিহাসটা তুলে ধরা ।
১৯৯৩ সাল। রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত সে-সময় বিরোধীদের মুখে। আর সেই সময় বিরোধীপক্ষের অন্যতম লড়াকু মুখ মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।
সেদিনের ঘাটন এখনও দগদগে বাংলার রাজনীতিতে। ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা নিজে। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ইব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের।
পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অশান্তির ভরকেন্দ্র ছিল মধ্য কলকাতা। ধীরে ধীরে সারা কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। তখন গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর।
কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি ।