গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে গত ১৫ দিন নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। অথচ দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের ওই ঘটনা তো বটেই, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অবনমন নিয়ে নিজের ‘অসহায়তা’ দাবি করে বিধায়ক অশোক দেবের মন্তব্য, ‘‘যা শুনি, যা দেখি, তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক আছে? কিন্তু বলব কাকে? কে শুনবেআমার কথা?’’
গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রকে ওই কলেজে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিলেন পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন ছাত্রনেতা অশোকই— এই গুরুতর অভিযোগের জবাবদিহির দায় এখন তাঁর। বিশেষত, মনোজিতের নামে আগেই যেখানে একাধিক অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ ছিল, সেখানে সুপারিশ করলেন কী করে? তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা অশোকের দাবি, ‘‘কে কী করবে, তা জানা সম্ভব? তবে আগে এই রকম কেউ রাজনীতিতে আসার সাহস করত না।’’ অভিযুক্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, তাঁর সঙ্গে ছবি সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কেউ জেঠু ডাকে। এমনও আছে, বাপ-ছেলে, দু’জনেই দাদা ডাকে!’’ সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতির জমি চেয়েছি, নিজের জমি-বাড়ি চাইনি। এখন সব দাদা ধরে আসছে, দেনা-পাওনা দেখছে! দলের কথা ভাবে না, মমতার কথাও ভাবে না! ’’
কিন্তু কিছুই যদি না করতে পারেন, কথা শোনার কেউ না-ই থাকেন, তা হলে পদে আছেন কেন? পাঁচটি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তো তিনি। অশোকের দাবি, ‘‘আমি তো চাইনি। কলেজ কেন, কোনও পদই চাইনি কখনও।’’ আর দলেরই এক নেতা বলেন, ‘‘এখনকার রাজনীতিতে অশোকদাদের এটাই সংকট। ছাড়তেও পারেন না আবার তাঁদের সামনে রেখে চলা কাজকর্ম বন্ধের ক্ষমতাও রাখেন না।’’
মেসের চৌকিতে জীবন কাটিয়েছেন টানা ৩০ বছরের বিধায়ক অশোক। তবে আইন কলেজের ঘটনার পরে বিরোধীরা তাঁকে ছাড় দিচ্ছেন না স্বাভাবিক ভাবেই। বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের মতে, ‘‘যে ভোটে ভাল ফল করবে, যে দলের প্রতি অনুগত, যে বেশি টাকা তুলতেপারবে, তৃণমূলের কাছে সে-ই ভাল। তৃণমূল মানুষের চরিত্র, তারঅপরাধের ইতিহাস, তার অতীত কর্মকাণ্ড দেখে শংসাপত্র দেয় না। উনি (অশোক) দীর্ঘ দিনের রাজনীতিক। তবে ওঁর পক্ষে দলের নীতির বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে হেতু অশোক দেব, তাই তিনি আরও ভাল করে খোঁজ নিয়ে সুপারিশ করবেন, এটাই তো প্রত্যাশিত! ওই কারণেই বলতে হয়, অসৎ-সঙ্গে সর্বনাশ! তৃণমূলে এটাই দস্তুর।’’
আর আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁর ব্যাখ্যা আদপেই যথেষ্ট নয় বুঝে অশোক বলছেন, ‘‘ধাক্কা লেগেছে। কলেজের গোলমালে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় মা’কে শেষ বার দেখতে যেতে পারিনি। মিটিং করেছি, মারামারিও করেছি। কিন্তু এ সব কথা ভাবতেই পারি না!’’