• শুধুই কি এলাকা সংযুক্তি? খুনের পরে ভাঙড় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ১২ জুলাই ২০২৫
  • কলকাতা পুলিশের অধীনে আসার পরে পেরিয়েছে দেড় বছর। কিন্তু ভাঙড় কি এখনও তার পুরনো অবস্থাতেই? ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে এক তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনা সামনে আসার পরে নতুন করে এই প্রশ্নই উঠছে। বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তা অবরোধ, ভাঙচুর, পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, পুলিশের উপরে হামলা— কিছুই বন্ধ হয়নি দেড় বছরে। উল্টে আটটি থানা তৈরি করা হলেও তার মধ্যে চারটি থানার ভবন এখনও তৈরিই করে ওঠা যায়নি। বাহিনী মোতায়েন করে তৈরি করা যায়নি আলাদা ব্যাটালিয়নও। বাহিনীর সদস্যদেরই একাংশের প্রশ্ন, শুধু কি এলাকা সংযুক্তির পর্যায়েই রয়ে গেল সবটা?

    জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে যেখানে খুন হয়েছে, সেই জায়গা ভাঙড় থানার কাছেই। বিজয়গঞ্জ বাজার থানা ভবন যদি তৈরি হয়ে যেত, তা হলে সেই থানা থেকে এই ঘটনাস্থল একশো মিটারের মধ্যে হত বলে স্থানীয়দের দাবি। সে ক্ষেত্রে কি পুলিশি নজরদারিতে এই ঘটনা এড়ানো যেত? স্থানীয়দের দাবি, ভাঙড়ের বহু এলাকা পুলিশের নজরদারির আওতায় আসেনি। সেখানে না আছে সিসি ক্যামেরা, না পর্যাপ্ত আলো। পুলিশের গাড়ি টহল দিতেও তেমন দেখা যায় না বলে অভিযোগ। অতীতেও এই বিজয়গঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে জেনেও কেন পর্যাপ্ত নজরদারি এলাকায় নেই, সে প্রশ্ন উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সামনে আসছে ভাঙড় (২) পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষের উপরে অতীত হামলার প্রসঙ্গ। তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কার অভিযোগ পেয়ে সেই সময়ে সাদা পোশাকে টানা নজরদারি চালিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। এ ক্ষেত্রে কি ভাঙড় ডিভিশনের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে খবর ছিল না?

    ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে সাত জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে বারুইপুর পুলিশ জেলার ভাঙড় ও কাশীপুর থানা ভেঙে কলকাতা পুলিশের অধীনে শুরু হয় ভাঙড় ডিভিশনের উত্তর কাশীপুর, পোলেরহাট, ভাঙড় ও চন্দনেশ্বর থানা। মাধবপুর, বোদরা, হাতিশালা ও বিজয়গঞ্জ বাজার নামে আরও চারটি থানার কাজ শুরু করা হলেও সেগুলির ভবন এখনও তৈরি হয়নি। উত্তর কাশীপুর, পোলেরহাট, ভাঙড় ও চন্দনেশ্বর থানা ভবন থেকেই কাজ চলছে।

    যদিও সংযুক্তির সময়ে কলকাতা পুলিশের নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছিল, ভাঙড় ছাড়া কলকাতা পুলিশের মোট এলাকা কমবেশি ৩১১ বর্গ কিলোমিটার। অন্য দিকে, ভাঙড়ের দু’টি ব্লক মিলিয়েই আয়তন প্রায় ২৭৩ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু প্রায় সমান এলাকা দেখাশোনার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন, তা বাহিনীতে কোথায়? যেখানে প্রতিটি ডিভিশনের জন্য আলাদা ফোর্স রয়েছে এবং ব্যাটালিয়ন থেকে বাহিনী নিয়ে গিয়ে সামাল দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে ভাঙড়ের মতো বিশাল এলাকায় এ সব না করে সামলানো যাবে কী করে? এর মধ্যেই বার বার ভাঙড়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ওয়াকফ গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়েও আক্রান্ত হতে হয়েছে পুলিশকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি। এর পরে দ্রুত আলাদা ব্যাটালিয়ন তৈরির ব্যাপারে জোর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু বিষয়টি এখনও সেই ঘোষণার পর্যায়েই। এর মধ্যেই এলাকায় হয়ে গেল আরও একটি খুন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)