• পুরুলিয়ার সভাধিপতির ধানখেতে ধান রোপণের নজির, বললেন— “মাটির টান ভুলতে পারি না”...
    আজকাল | ১২ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চারদিকে চলছে বর্ষার বৃষ্টি, আর সেই বর্ষার জলকে আশীর্বাদ করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে আমন ধানের চাষ। চাষিদের ঘরে-ঘরে এখন ব্যস্ততা, জমিতে জমিতে ধান রোপণের ধুম। ঠিক এমন এক সময়ে দেখা গেল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য—পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো নিজে ধানখেতে নেমে রোপণ করছেন ধান। পার্টির নানা সাংগঠনিক ব্যস্ততা ও প্রশাসনিক দায়িত্বের মধ্যেও তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন এক গ্রামের ধানখেতে।

    চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে ধান রোপণ করতে করতে তিনি জানালেন—“আমি ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ধানখেতে নেমে ধান রোপণ করতাম। তখন বুঝতাম না কতটা আনন্দ লুকিয়ে আছে এই কাজে। আজ এত বছর পর আবার সেই স্মৃতির টানেই নেমে পড়লাম খেতে।” প্রশাসনের উচ্চপদে থেকে সাধারণ মানুষজনের জীবন-জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হওয়ার এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে বিরল। এদিন তিনি শুধুমাত্র ধান রোপণেই থেমে থাকেননি, গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলেন, শোনেন তাঁদের সমস্যার কথা।

    আরও পড়ুন: ফেসবুক ফলোয়ার থাকলেই ঘরে বসে আয়! ফেসবুক থেকে উপার্জনের মারপ্যাঁচ জেনে নিন 

    নিবেদিতা মাহাতো বলেন, “আজকের দিনটা আমার কাছে খুবই আনন্দের। এই বৃষ্টিভেজা মাটি, ধানের চারা, আর সবার সঙ্গে একসাথে কাজ করার মধ্যে যে আনন্দ আছে, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ভবিষ্যতেও আমি এই ধরনের কাজ করে যেতে চাই। মাটির গন্ধ আমাকে বরাবরই টানে।” তিনি আরও বলেন, “আগামী দিনে আমার ইচ্ছে, একটি ধান রোপণ উৎসব করা, যেখানে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ধানখেতে নামব। কাজের ফাঁকে এমন কিছু মুহূর্ত আমাদের জীবনের আসল আনন্দ বয়ে আনে।”

    একজন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি হয়েও চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে মাঠে নেমে ধান রোপণের এই নজির সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “নেতারা যখন মাঠে নামেন, তখন আমাদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়।” মাটির টানে, মানুষের ডাকে নিবেদিতা মাহাতোর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। বর্ষার ধারা আর চাষের ব্যস্ততার মাঝে তিনি যেন ফিরিয়ে আনলেন হারিয়ে যাওয়া সেই চিরচেনা গ্রামীণ বন্ধন।

    আরও পড়ুন:  মুখে ময়দা মেখে ফর্সা মহিলা সেজে দুবাই প্রবেশের চেষ্টা ৩ নাইজেরিয়ান যুবকের! আলজেরিয়ায় গ্রেপ্তার 

    আমন ধান বাংলার শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী ফসলগুলির একটি। সাধারণত বর্ষা শুরু হলে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়। আকাশে মেঘ জমলেই চাষিরা আশায় বুক বাঁধেন—এবার ফলন ভালো হবে কি না। কাদা জমিতে পা ডুবিয়ে, গান গেয়ে গেয়ে তারা ধানের চারা রোপণ করেন।

    আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই ধান বড় হতে থাকে আর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে আসে কাটার সময়। এই ধান মূলত বৃষ্টির জলে চাষ হয় বলে একে বর্ষার ধানও বলা হয়। একবার এক বৃদ্ধ চাষি বলেছিলেন, “আমন ধানের গন্ধ মানেই আমার ছেলেবেলার ঘ্রাণ। নতুন ধান ভাজা আর পিঠে-পায়েস খাওয়ার দিন ফিরে আসে তখন।”

    আসলে আমন শুধু ফসল নয়, বাংলার আত্মা। সে আমাদের ভাতের থালা, উৎসব, আর পরিশ্রমের গল্প—সবকিছুর সঙ্গে মিশে আছে।
  • Link to this news (আজকাল)