• বয়েজ হস্টেলে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, চাঞ্চল্য আইআইএম জোকায়
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ জুলাই ২০২৫
  • কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ক্যালকাটা (আইআইএম জোকা)-র বয়েজ হস্টেলে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। শুক্রবার রাতে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ‘নির্যাতিতা’। তারপর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত যুবক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান আইআইএম জোকার ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। তিনি কর্নাটকের বাসিন্দা। ২০২৩ সালে ক্যাট পরীক্ষা দিয়ে ম্যানেজমেন্ট কোর্সে সুযোগ পান তিনি। ২০২৪ সালের জুন মাসে আইআইএম জোকায় ভর্তি হন ওই ছাত্র।

    পুলিশ ইতিমধ্যেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪ এবং ১২৩ ধারায় মামলা রুজু করেছে। নির্যাতিতার বয়ান ও মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃত যুবককেও দফায় দফায় চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ জানিয়েছে, আইআইএম কলকাতার জোকা ক্যাম্পাসের ওই ছাত্রের সঙ্গে নির্যাতিতার পূর্ব পরিচয় ছিল।

    এদিকে নির্যাতিতার বাবার বক্তব্য, ‘মেয়ের সঙ্গে কেউ অত্যাচার বা খারাপ ব্যবহার করেনি।’ মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি বলেও সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন ‘নির্যাতিতা’-র বাবা। শনিবার দুপুরে তিনি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, শুক্রবার রাত ৯টা ৩৪ মিনিটে তিনি মেয়ের ফোন পান। জানতে পারেন, মেয়ে অটো থেকে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং জ্ঞান হারিয়েছেন। পরে জানতে পারেন, মেয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে রয়েছে। কেউ ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।

    অন্যদিকে নির্যাতিতা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ভর্তির জন্য কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিতে তাঁকে বয়েজ হস্টেলে ডাকেন ওই ছাত্র। সেখানে গেলে তাঁকে পিৎজা এবং জল খেতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। বমি পায়। ওই যুবক তাঁকে শৌচালয়ে যেতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তরুণীর দাবি, যুবক তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারেন। অচৈতন্য হয়ে পড়েন তরুণী। সেই সময়েই তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ। জ্ঞান ফেরার পরে তিনি দেখেন, তিনি বয়েজ হস্টেলেই রয়েছেন।

    তিনি প্রথমে ঠাকুরপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। পরে সেখান থেকে হরিদেবপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শুক্রবার গভীর রাতে। এর আগে গত ২৫ জুন কসবা আইন কলেজে এক ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় হয় রাজ্য। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আইআইএম কলকাতার হস্টেলে ফের ধর্ষণের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা।

    এদিকে এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এক তরুণী বয়েজ হস্টেলে ঢুকলেন? কেন নিরাপত্তারক্ষীরা আগেই বাধা দিলেন না? শোনা যাচ্ছে, ভিজিটার্স বুকেও তরুণীকে সই করতে দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত যুবক কি তবে প্রভাবশালী? সেই কারণেই তরুণীকে বয়েজ হস্টেলে ঢোকার পথে বাধা দেওয়া হয়নি? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।

    আইআইএম কলকাতার জোকা ক্যাম্পাসের এক প্রাক্তনীর বক্তব্য, বয়েজ বা গার্লস হস্টেলে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ঘর রয়েছে। সেখানে কোথাও আলাদা করে নজরদারির ব্যবস্থা নেই। এমনকী, ওয়ার্ডেন বা সুপারভাইজারও নেই। সেখানে মদ্যপানও নিত্য বিষয় বলে দাবি করেছেন তিনি। বিষয়টি যে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একেবারে অজানা, তা মানতে নারাজ ওই প্রাক্তনী। এদিকে আইআইএম জোকার চুক্তি-কর্মী, ইউনিয়নের সদস্য অর্ধেন্দু মণ্ডলের সাফ বক্তব্য, ‘কোনও স্টুডেন্ট অন্য স্টুডেন্টকে নিয়ে নিয়ে হস্টেলে ঢুকলে, কার কী বলার আছে!’

    দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইএম কলকাতা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান এতদিন শিক্ষার মানের জন্য পরিচিত ছিল, এখন সেখানে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ঘটনার দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন নির্যাতিতার সহপাঠীরা। এদিকে হরিদেবপুর থানায় গিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন তরুণী। আর তাঁর বাবা বলছেন, ওই জাতীয় কোনও ঘটনাই ঘটে। স্বভাবতই গোটা ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)