সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হরিদেবপুর থানায় নিজেই ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তরুণী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। অথচ তার কয়েকঘণ্টা পর নির্যাতিতার বাবার বয়ান রীতিমতো অবাক করা। নির্যাতিতার বাবার দাবি, ধর্ষণই নাকি হয়নি। তরুণীকে এমন বয়ান দিতে বলা হয়েছিল বলেই দাবি তাঁর। কেন এমন কথা বলছেন তরুণীর বাবা? স্বাভাবিকভাবে সে প্রশ্ন উঠছে।
নির্যাতিতার বাবা বলেন, “রাত ৯.৩৪-এ মেয়ে ফোন করেছিল গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে যায়। লোকেশনটা ও বুঝতে পারেনি। আমি খুঁজতে গিয়েছিলাম। রেসকিউ করতে। ওখানে ছিল না। খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারলাম পিজিতে আছে। লোকেশন দেখাচ্ছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট। নিউরোলজি ডিপার্টমেন্ট ওখানে যাই। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি হরিদেবপুর থানার পুলিশ ওকে রেসকিউ করে রেখে দিয়েছে। ওখানে যাই। পুলিশকে বলি। ওরা একটা অভিযোগের কথা বলেছে। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানলাম এরকম কোনও ঘটনা বলছে ঘটেনি।” তিনি আরও বলেন, “পুলিশ বলছে এফআইআর করেছি। একটা ছেলেকে অ্যারেস্ট করেছি। আমি মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানলাম মেয়ে বলল না এরকম কিছু হয়নি। আমাকে পুলিশ বলেছিল মেডিক্যালে গিয়ে এই বলবেন। আমি সেগুলো কিছু বলিনি।”
ধৃত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার সঙ্গে কী সম্পর্ক তরুণীর? তাঁর বাবা বলেন, “কোনও সম্পর্ক নেই।” তবে মেয়ের সঙ্গে এখনও তাঁর কথা হয়নি বলেই জানান। মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে কিছুটা সময় লাগবে বলেই দাবি তাঁর। নির্যাতিতার বাবার দাবি, জোর করে অভিযোগ লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কে জোর করে অভিযোগ লেখাল, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানাননি। স্বাভাবিকভাবেই নির্যাতিতার বাবার দাবি ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
জানা গিয়েছে, ওই তরুণী পেশায় একজন মনোবিদ। তাঁর দাবি, আইআইএম জোকার দ্বিতীয় বর্ষের অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় আলাপ। কাউন্সেলিং করানোর কথা বলে যুবক। সেই অনুযায়ী তাঁকে হস্টেলে ডেকে পাঠায়। সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ১১.৪৫ মিনিটে হস্টেলে যান তরুণী। মধ্যাহ্নভোজ সারেন। পিৎজা এবং মাদক মেশানো জল খাওয়ানো হয় তাঁকে। অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শৌচালয়ে যেতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তরুণীর দাবি, ওই যুবক তাঁকে মারধরও করে। এরপর অচৈতন্য হয়ে পড়েন। হুঁশ ফেরে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। প্রথমে ঠাকুরপুকুর থানায় যান। সেখান থেকে হরিদেবপুরে যান। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্ষণ, অপরাধের উদ্দেশ কিছু খাইয়ে অচেতন-সহ আরও তিনটি ধারায় ধৃতের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত তার পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে জারি হয়েছে জোর রাজনৈতিক শোরগোল। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ থেকে আইন কলেজ, ম্যানেজমেন্ট কলেজ ? সর্বত্র এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখছি। এসবের জন্য বাংলার বাইরে আমরা মুখ দেখাতে পারি না। ভাবতে হবে, রাজ্যটা কাদের হাতে চলছে। এসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বিবৃতি নেই। তাহলে কি ধরে নিতে হবে ধর্ষণের ঘটনা ওঁর কাছে সমর্থনের?” সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, “এটা নিয়ে আলাদা কোনও মন্তব্য করব না। তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট। রাজ্য সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হোক বা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিরাপদ নয় কেউ। না ছাত্রছাত্রী, না শিক্ষক, না কর্মীরা।” কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। আইআইএম জোকার গেটের বাইরে বিক্ষোভও দেখান কর্মী-সমর্থকরা।