মইনুলের সাম্রাজ্যে অফিস খুলে টার্গেট হন তৃণমূল কর্মী আজাদ, আগে চারবার খুনের চেষ্টা হয়েছিল
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা মালদহ ও মানিকচক: তৃণমূল কর্মী আবুল কালাম আজাদ (৩৪) আকস্মিক খুন হননি। তাঁকে খুন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র করছিল ‘জমি মাফিয়া’ মইনুল। ছেলে খুন হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর ‘বর্তমান’-এর কাছে এমনই দাবি করলেন মানিকচকের গোপালপুরের কালীটোলা গ্রামের বাসিন্দা আজাদের বাবা মহম্মদ আইনুল হক। এমনকী আজাদকে খুন করার পরে তাঁর মৃতদেহের কাছেই দাঁড়িয়েছিল মইনুল। আজাদ তার হুমকি না শোনাতেই প্রাণ দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছে বলে সদ্য পুত্রহারা বাবাকে স্পষ্ট জানিয়েছিল সে। অভিযোগ করেছেন আইনুল। এদিকে এই খুনের ঘটনার জেরে ইতিমধ্যে মূল অভিযুক্ত মইনুল শেখ সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। শনিবার মৃতের বাবা বলেন, আমি আজাদকে বারবার মইনুলকে নিয়ে সতর্ক করেছিলাম। আগে চারবার আমার ছেলের ওপরে হামলা করেছে ওই জমি মাফিয়া। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
আজাদের পরিবার ও পরিজনদের দাবি, গায়ের জোরে, টাকার দাপটে লক্ষ্মীপুর এলাকায় কার্যত একতরফা জমির দালালি শুরু করেছিল মইনুল। সে ব্যবসায় কোনও নীতির বালাই ছিল না। অন্যদিকে, মানিকচকের বাসিন্দা আজাদও জমি ব্যবসায় ক্রমশ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছিলেন মইনুলের। এক বছর আগে মইনুলের সাম্রাজ্যেই নিজের একটি অফিস খুলেছিল আজাদ। তাতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল মইনুল। সেইসময় আজাদের উপর হামলা করা হয়। তবে পরে উভয়পক্ষ মীমাংসা করেছিল। মইনুল ক্ষমাও চেয়েছিল। কিন্তু আজাদের উপর আক্রোশ কমেনি। তাই নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে আজাদকে। মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবারের বক্তব্য, গত চার বছর আগে মইনুলের সঙ্গেই জমির ব্যবসা শুরু করেন আজাদ। পরে তিনি জানতে পারেন, জমির কারবারে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করছে মইনুল। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জমি বিক্রি করছে। কাগজপত্রও ঠিক নেই। এরপরই আলাদাভাবে জমির ব্যবসা শুরু করেন আজাদ। খুব কম সময়ের মধ্যেই জমি ব্যবসায় ব্যাপক প্রতিপত্তি হয় তাঁর। বিশেষত নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বাকি রেখেই জমি দিয়ে দিতেন তিনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ মানুষই তাঁর কাছ থেকে জমি ক্রয় করতে শুরু করেন। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ে মইনুল। আগুনে ঘি পড়ে এলাকায় মইনুলের সাম্রাজ্যে আজাদ নতুন অফিস খোলার প্রস্তুতি নিতে। সেটা মেনে নিতে পারেনি মইনুল।
মৃতের বাবা বলেন, সেখানে অফিস খুলতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু আজাদ বলেছিল কিছু হবে না। সেদিন রাতে ছেলে এলাকার দু’জন এবং ঘোড়াপীরের বন্ধু জুলফিকারকে নিয়ে মইনুলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। অনেক রাত হওয়ায় তাঁকে ফোন করি। আজাদ জানায় সে বাড়ি আসবে না। পরবর্তীতেই জুলফিকার ফোন করে জানায় ছেলেকে খুন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ছেলের মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে মাইনুল। সে বলে, আপনার ছেলেকে বারবার ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম, সে শোনেনি। তাই তাঁর এই পরিণতি করে দিয়েছি।
অন্যদিকে, মৃতের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী টুম্পা খাতুন বলেন, সেদিন তিনি স্বামীর সঙ্গে জন্মদিনের পার্টিতে যাননি। অথচ তাঁর কথা বারবার বলা হচ্ছে। স্বামীকে চক্রান্ত করে ডেকে খুন করা হয়েছে। পুলিসের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, মইনুল সহ ধৃত চারজনকে পাঁচদিনের জন্য পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।