পুলিস, চিকিৎসকদের নিয়ে প্রতি স্কুলে বাল্যবিবাহের কুফল বোঝাচ্ছে প্রশাসন
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: ১৮ বছরের আগেই অনেক নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে গর্ভবতীও হয়ে পড়ছে। এদিকে স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করতে না করতেই উপার্জনের পথ বেছে নিচ্ছে নাবালকরা। ফোনের অপব্যবহার করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে নাবালক ও নাবালিকারা। এতে সামাজিক ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলি প্রত্যক্ষ করে মাঠে নেমে পড়েছে প্রশাসন।
জেলা শিক্ষা দপ্তর এবং প্রশাসনের উদ্যোগে মালদহের একেশোটি হাইস্কুলে সচেতনতামূলক শিবির করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৯ জুলাই থেকে জেলাজুড়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত চারদিনে ২৫টির বেশি স্কুলে এই শিবির হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত স্কুলে স্কুলে এই শিবির চলবে।
ইতিমধ্যে শিক্ষাদপ্তর এবং ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ময়না, তারিকুল্লাহ স্কুলে এই সচেতনতামূলক শিবির করা হয়েছে। শুক্রবার দোহিল হাইস্কুলে সচেতনতামূলক এই শিবিরে পুলিস, ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। কন্যাশ্রীর মেয়েরা বাল্যবিবাহ রোধে নাটক করে। নাটকের মাধ্যমে বাকি পড়ুয়াদের বাল্যবিবাহের নানা কুফল বোঝানো হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে মালদহ জেলায় গর্ভবতীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩ হাজার। এর মধ্যে কিশোরী ১৫ হাজার ৬০ জন। তাঁদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। মালদহ জেলা এডুকেশন অফিসার স্মিতা সুব্বা বলেন, আমাদের লাগাতার সচেতনতা শিবির চলছে। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ টি স্কুলে সচেতনতা শিবির হবে। বেশ কিছু স্কুলে হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, দ্বিতীয় ধাপে বামনগোলা ব্লকে পাঁচটি, চাঁচল ব্লকে ১৩টি, ইংলিশবাজার শহর এবং গ্রামের আটটি, গাজোল ব্লকে আটটি, হবিবপুর ব্লকে পাঁচটি, হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকে ১৪টি স্কুলে এই শিবির হবে। কালিয়াচক ব্লকে ২২টি, মানিকচক ব্লকে সাতটি, পুরাতন মালদহ শহর এবং গ্রামে ছয়টি স্কুলে এবং রতুয়া ব্লকে ১২টি হাইস্কুলে সচেতনতামূলক শিবির করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাজোল ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাত নাবালিকার বিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে।
বাল্যবিবাহ রুখতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সচেতনতামূলক শিবির করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। আগামী ১৪ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত গারাদোহুল, গোবিন্দপুর, আলিনগর, দারানিভূবন বিদ্যাপীঠ, রামনগর হাইস্কুলে শিবির হবে। গাজোল ব্লক প্রশাসনের এই সচেতনতামূলক শিবিরের দলে থাকছেন উৎকর্ষ বাংলার ইনচার্জ অমিত হালদার। তিনি বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে জেলাজুড়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। আমাদের ব্লকে মোট ৮টি স্কুলে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি স্কুলে তিন ঘণ্টার বেশি আমরা সময় দিচ্ছি। পুলিসও শিবিরে উপস্থিত থেকে বোঝাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে করা অপরাধ। নাবালক বা নাবালিকার বিয়েতে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও রেহাই পাবেন না। ১৮ বছরের আগে বিয়ে এবং গর্ভবতী হয়ে যাওয়া শরীরে পক্ষে কতটা ক্ষতিকর, ডাক্তাররাও সতর্ক করছেন।
গাজোল সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশান্ত রায় বলেন, এটা শিক্ষা দপ্তর এবং প্রশাসনের যথেষ্ট ভালো উদ্যোগ। এর আগেও আমাদের সার্কেলে হয়েছে। এবারও হচ্ছে। আমি কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের বুঝিয়েছি।