• আট ঘণ্টা আটকে থাকা ১৬ জনকে উদ্ধার করল প্রশাসন
    বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ‘আপনাদের দ্রুত উদ্ধার করা হবে। ভয় পারেন না। ঘাটে দাঁড়িয়ে থেকে উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহকুমা শাসক নিজে। কোনওভাবেই নৌকা থেকে ঝাঁপ দেবেন না।’ ফোনে ক্রমাগত চিৎকার করেই চলেছেন জামুড়িয়া থানার ওসি সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফোনের অপরপ্রান্তে তখন প্রাণ হাতে নিয়ে নৌকায় বসে ১৬জন। রাতে উত্তাল অজয়  পার হতে গিয়ে তাঁরা বিপদে পড়েন। মোটরচালিত নৌকা বিকল হয়ে যাওয়ায় প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল নৌকা। কোনওরকমে জলপ্রকল্পের পাইপে আটকে যায়। রাত ৮টা নাগাদ প্রশাসন সেই খবর পায়। তারপরই উদ্ধারে ঝাঁপায় পুলিস-প্রশাসন। রাতভর চেষ্টায় আট ঘণ্টা পর সব বাসিন্দাকে সুস্থভাবে পাড়ে আনা সম্ভব হয়। স্বস্তি ফেরে জামুড়িয়া থানার বাগডিয়া সিদ্দপুর ঘাটে। ভয়াবহ নৌকাডুবির হাত থেকে বরাতজোরে রক্ষা পেলেন জামুড়িয়া ও বীরভূমের নবসন, বড়রা গ্রামের বাসিন্দারা। নৌকায় থাকা যাত্রী সুদীপ চাঁদ বলেন, প্রতিদিনের মতো আমরা জামুড়িয়ার কারখানায় নাইট শিফটে ডিউটি করার জন্য নৌকায় উঠেছিলাম। দু’কূল ছাপিয়ে বইছিল অজয়। মাঝ নদীতে নৌকা যেতেই মোটরের কাপলিং বেল্ট ছিড়ে যায়। নদীর প্রবল স্রোতের মুখে পড়ে নৌকা। হঠাৎই ঩নৌকা জলপ্রকল্পের পাইপলাইনে আটকে যায়। গাঢ় অন্ধকারে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবেছিলাম। পুলিস-প্রশাসনের তৎপরতায় রক্ষা পেলাম।  অজয়ে নৌকা আটকে পড়ার খবর পেয়ে তৎপর হয় পুলিস ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নদীর ফেরিঘাটে আসেন আসানসোলের মহকুমা শাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, জামুড়িয়ার বিডিও অরুণালোক ঘোষ সহ পুলিসের আধিকারিকরা। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীদের উদ্ধার করতে বোট নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। মাঝ নদীতে আটকে থাকা যাত্রীদের সাহস জোগাতে ও উদ্ধারকার্য চালাতে জোরালো আলো আনা হয়। যাত্রীদের ফোন করে সাহস জোগানোর চেষ্টা করেন প্রশাসনিক কর্তারা। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রথম বোটটি মাঝ নদীতে ফুটো হয়ে যায়। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাই কোনওরকমে সেই নৌকায় উঠে প্রাণ বাঁচান। পরিস্থিতি জটিল বুঝে স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স(এসডিআরএফ)কে ডাকেন জেলাশাসক পোন্নমবলম এস। পাশাপাশি জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আরও একটি বোট আনা হয়। বোট ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দফায় দফায় যাত্রীদের উদ্ধার করে পাড়ে আনা হয়। সবাইকে খাবার ও জল খাইয়ে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে প্রশাসন। জানা গিয়েছে, বীরভূমের নবসন ঘাট থেকে নৌকাটি রওনা দিয়েছিল। নবসনের ১৪জন ও বড়রা গ্রামের একজন বাসিন্দা আর এক মাঝি নৌকায় ছিলেন। বেশিরভাগই জামুড়িয়ার বেসরকারি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। প্রতিদিনই এই ঘাট থেকে জামুড়িয়ার বাগডিয়া সিদ্দপুর ঘাট পর্যন্ত নৌকা যাতায়াত করে। সেই রুটেই এদিন বিপর্যয় হয়। জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, সবাইকে সুস্থভাবে উদ্ধার করা গিয়েছে। এটাই আমাদের সাফল্য। মহকুমা শাসক সারারাত ঘাটে থেকে উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)