অপরাধের টাকায় বিলাসিতা চলবে না আদালতের নির্দেশে ৩ অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: কেউ মাদক মামলায় অভিযুক্ত, কেউ কয়েক কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত। ওই সব টাকায় ফুলে ফেঁপে বিশাল বিশাল বাড়ি, সম্পত্তি তারা তৈরি করেছিল। আদালতে মামলা চললেও দিব্যি চলত অপরাধের টাকায় বিলাসিতা। তবে এবার আর নয়, জেলার দু’টি আদালতের নির্দেশে অবৈধ অর্থে তৈরি অথবা কেনা এমন তিনটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিস। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর করতে পারবে না অভিযুক্ত কিংবা তার পরিবারের লোকজনও। জেলা পুলিসের দাবি, এতে একধারে যেমন অপরাধীরা তাদের অবৈধ উপায়ে তৈরি সম্পদের সুবিধা পাবে না, তেমনই ওইসব সম্পত্তি পরবর্তীতে প্রতারিতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রানিনগরের নবিপুরের সাইবুর ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি বিনিয়োগের নাম করে এলাকার প্রচুর মানুষের কাছে থেকে টাকা তুলেছিল। তার কাছে টাকা বিনিয়োগ করা হলে কয়েকগুণ রিটার্ন পাওয়া যাবে বলে টাকা তুলেছিল। প্রথমে একবার ভালো রিটার্ন দেওয়ার পর আর টাকা দেয়নি। পরবর্তীতে পুলিসে অভিযোগ দায়ের হয়। গুরুত্ব বুঝে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে পুলিস। সিটের ওই বিশেষ টিমের দায়িত্বে ছিলেন ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ। তদন্তে গিয়ে পুলিস প্রমাণ পায়, আর্থিক প্রতারণার ওই বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যবহার করে রানিনগরের নবিপুরে প্রায় ৩.৩৬ কোটি টাকার বিশাল বিল্ডিং তৈরি করেছে অভিযুক্ত। এরপরই লালবাগ আদালতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। আদালতের তরফে অভিযুক্তকে ওই সম্পত্তির জন্য ব্যবহৃত বৈধ অর্থের তথ্য দেখাতে বলা হয়। একাধিক নোটিসেও তেমন সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় শেষপর্যন্ত আদালত ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। এরপরই শনিবার ওই ব্যক্তির বাড়ির সামনে নোটিস লাগায় পুলিস। পাশপাশি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি কোনওভাবেই তারা বিক্রি, লিজ, হস্তান্তর ও ব্যবহার করতে পারবেন না।
একই দিনে অন্য একটি মামলায় ডোমকলের আলিনগর ঘাটপাড়ার মাদক মামলায় রাজ্জাক মোল্লা নামের এক ব্যক্তির প্রাসাদপম বাড়ি ফ্রিজ করা হয়। এনডিপিএস আইনের নির্দিষ্ট ধারায় আদালতের নির্দেশে প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকার ওই বাড়িটিকে ফ্রিজ করে ডোমকল থানার পুলিস। পুলিসের তরফে জানানো হয় বহরমপুর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িটিকে বিক্রি, হস্তান্তর, লিজ দেওয়া যাবে না। ডোমকলের পাশাপাশি জলঙ্গিরও এক মাদক মামলায় অভিযুক্তের সম্পত্তি ফ্রিজ করে পুলিস। জলঙ্গির ঘোষপাড়ার আইনাল হক মণ্ডলের প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার ওই বাড়িটিকেও এদিন ফ্রিজ করা হয়।
ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ বলেন, আদালতের নির্দেশে এদিন তিনটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত অথবা ফ্রিজ করা হয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওইসব সম্পত্তি তারা ব্যবহার, বিক্রি, হস্তান্তর-কোনও কিছুই করতে পারবে না।