৫ বছর ধরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ঠাঁই আউশগ্রামের বৃদ্ধ দম্পতির, ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙেছে ঘর, মেলেনি সরকারি বাড়ি
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: ঝড়ে ভেঙে গিয়েছিল মাটির বাড়ি। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচে পরিবারের। তবে হারিয়ে গিয়েছে শেষ আস্তানা টুকু। সেই থেকে আউশগ্রামের বিল্বগ্রামে পাঁচবছর ধরে পরিত্যক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধ দম্পতির। বয়সের ভারে কাজ করার শক্তি তাঁরা হারিয়েছেন। ভিক্ষে করে, বিড়ি বেঁধে কোনওরকমে চলে সংসার। প্রশাসনের দরজায় ঘুরেও বাংলার বাড়ি পাননি পিয়ারত শেখ ও তাঁর স্ত্রী রসুলা বিবি। একাধিকবার প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তবুও আবাসের তালিকায় ওই বৃদ্ধ দম্পতির নাম আসেনি। পিয়ারত শেখ বলেন, আমি গরিব মানুষ। কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী ভিক্ষা করেন। আর অবসর সময়ে বিড়ি বেঁধে সংসার চলে। ভাঙা ঘর মেরামত করার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিলে রাস্তায় থাকা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় থাকবে না। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির অবস্থাও ভালো নয়। বৃষ্টিতে ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে। ঘরের ভিতর বাসা বেঁধেছে বিষধর সাপ। জীবন-মৃত্যুর দোলাচলেই কোনওরকম মাথাগুঁজে কাটাতে হয়। পিয়ারত শেখ ও তাঁর স্ত্রী রসুলা বিবির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে আমিনা খাতুন ও ছোটো মেয়ে সামিনা খাতুন। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমিনার গ্রামেই বিয়ে হয়েছে। কিন্তু, তাঁর স্বামী অসুস্থ। বর্ধমানে তাঁকে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। আমিনা বলেন, আমরা ছিটেবেড়া দেওয়া ঘরে বাস করি। তাছাড়া আমার স্বামীও কাজ করতে পারেন না। বাবা-মার সংসার টানার সামর্থ্য আমারও নেই। খুব কষ্টেই ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তাঁরা রয়েছেন। তবে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় সেখানেই পড়াশোনা ও রান্না বান্না চলে। রসুলা বিবি বলেন, আমি প্রশাসনকে বাড়ি তৈরির জন্য বহুবার কাগজপত্র জমা করে এসেছি। বারবার বিডিও অফিসের লোকজন আমাদের দেখে গিয়েছেন। তবুও আমাদের তালিকায় নাম আসেনি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রতে আমাদের কষ্টেই থাকতে হয়। দূর থেকে জল বয়ে আনতে হয়।
বিল্বগ্রামের বাসিন্দা শেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন, পিয়ারত শেখ দুঃস্থ মানুষ। কয়েক বছর ধরেই তাঁরা আইসিডিএস সেন্টারে রয়েছেন। তাঁদের কেন তালিকায় নাম নেই সেটাই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে তাঁদের বাংলার বাড়ির তালিকায় নাম আসেনি। তবে উনি যদি মুখ্যমন্ত্রী হেল্প লাইনে ফোন করেন। তাহলে আমরা আবার ভেবে দেখতে পারি। তবুও আমরা খোঁজ নিচ্ছি অন্যভাবে ওই দম্পতিকে কোনওভাবে সাহায্যে করা যায় কি না। • নিজস্ব চিত্র