সিনেমা নয়, বাস্তবেই বর্ধমানের স্কুল থেকে উধাও ‘ব্যাকবেঞ্চ’
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘স্থানর্থী শ্রীকুত্তান’। কেরলের এই সিনেমা ক্লাসরুম সম্পর্কে ধারণাটাই বদলে দিয়েছে। ‘ব্যাকবেঞ্চ’ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের কথা। পিছনের সারিতে বসতে বসতে তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা যায়। সেকারণেই ওই সিনেমায় ব্যাকবেঞ্চ উধাও করে দেওয়া হয়েছে। সব পড়ুয়াই প্রথম বেঞ্চের ছাত্র। সিনেমার সেই দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের স্কুলগুলিতে। আপাতত কালনা-২ ব্লকের ঝিকরা রাহমানিয়া এফপি স্কুল, বর্ধমান-১ ব্লকের বেলকাশ এফপি স্কুল, কেতুগ্রামের রাজুর বান্ধব হাইস্কুলে। পরে জেলার অন্যান্য স্কুলগুলিতেও এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, খুব ভালো উদ্যোগ। সব পড়ুয়ার মধ্যেই আত্মবিশ্বাস বাড়বে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, ইংরেজির ইউ এর মতো করে বেঞ্চগুলি সাজানো হচ্ছে। ক্লাসরুম একটু বড় হলে এই ব্যবস্থা সহজেই করা যায়। এক শিক্ষক বলেন, প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য একশ্রেণির পড়ুয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। তাদের অনেকেই ক্লাসরুম খোলার অনেক আগে থেকেই হাজির হয়ে যায়। আবার কিছু ছাত্র প্রথম বেঞ্চ ফাঁকা থাকলেও বসে না। শেষ সারিতেই তারা বসতে পছন্দ করে। তাদের প্রথম থেকেই মনোবল ভেঙে যায়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় কেউ ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র বলে দাবি করতে পারবে না। শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সিনেমা রিলিজের পর কেরলের বহু স্কুলেই ব্যাকবেঞ্চ উধাও হয়ে যায়। পূর্ব বর্ধমানের একটি স্কুলে অবশ্য এক বছর আগে থেকেই ব্যাকবেঞ্চ উধাও হয়ে গিয়েছে। তাতে সেই স্কুলের পড়ুয়াদের মনোবল বেড়েছে। তাদের দাবি, এখন আর বেঞ্চের বসার জন্য হুড়োহুড়ি করতে হয় না। সবাই প্রথম সারিতে বসে। শিক্ষক ক্লাসের মাঝখানে বসে ক্লাস নেন। সবাইকেই তিনি দেখতে পান। কান্দরা জ্ঞানদাস স্কুলে নবম শ্রেণিতে ব্যাকবেঞ্চ নেই। ধাপেধাপে অন্য ক্লাসগুলিতেও এই ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেতুগ্রামের রাজুর বান্ধব হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ অনিরুদ্ধ ঠাকুর বলেন, আমরা আপাতত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু করেছি। পড়ুয়াদের মধ্যে অন্যরকম উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জেলার স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান কতটা উন্নত হয়েছে, তা জানতে রেটিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। মিড ডে মিলেও আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবার বদলে যাচ্ছে ক্লাসরুম। সব পড়ুয়াই এবার থেকে দাবি করবে, আমরা ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র। ক্লাসে ঢুকে বেঞ্চ দখল করার জন্য পড়ুয়াদের সেই হুড়োহুড়ি উধাও। এখন সকলেই প্রথম বেঞ্চে বসে একমনে ক্লাস করছে। প্রথম বেঞ্চে বসার মনোবল অনেককে এগিয়ে দেবে। মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।