মোদি-শাহের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ তত্ত্ব খারিজ নীতি আয়োগের রিপোর্টেই
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৫
প্রীতেশ বসু কলকাতা
বাংলায় নির্বাচন এলেই ‘অনুপ্রবেশে’র তত্ত্ব নাগাড়ে আওড়াতে দেখা যায় তাবড় বিজেপি নেতাদের। যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত সবার একটাই কথা—পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের আশ্রয় দিচ্ছে ‘বাঙ্গাল কা সরকার’। তবে তাবড় বিজেপি নেতাদের এমন দাবি যে ‘বিভ্রান্তিকর’, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সদ্য প্রকাশিত নীতি আয়োগের ‘সামারি রিপোর্ট ফর দ্য স্টেট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এ। তার মূল নির্যাস—বাংলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটাই কম। ২০২৩ সালের ‘সেন্সাস পপুলেশন প্রজেকশন’ অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির জাতীয় গড় ০.৯ শতাংশ হলেও, বাংলায় এই হার ০.৫ শতাংশ। কেন্দ্রের এই তথ্য মোদি-শাহের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত রাজনৈতিক তত্ত্বকে নস্যাৎ করল বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলা যদি সত্যিই অনুপ্রবেশকারীদের চারণক্ষেত্র হতো, সে ক্ষেত্রে রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিশ্চিতভাবে ছাপিয়ে যেত জাতীয় গড়কে।
এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘অনুপ্রবেশ নিয়ে চিৎকার করে ওরা (বিজেপি) যে শুধুমাত্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে, নীতি আয়োগের তথ্যে সেটা ফের স্পষ্ট হল। মনে রাখতে হবে, তত্ত্ব মনগড়া হতে পারে। কিন্তু তথ্য মিথ্যা কথা বলে না। আর যেখানে নীতি আয়োগই এই তথ্য দিচ্ছে, সেখানে ওদের আর মানুষকে বোকা বানানোর পথ রইল না।’
ঘুরপথে এনআরসি চালু করতেই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বেই কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অসমের বিজেপি সরকারের এনআরসি নোটিস পাঠানো নিয়েও সুর সপ্তমে চড়িয়েছেন তিনি। এমন একটা পরিস্থিতিতে দেশের নীতি নির্ধারক সংস্থার জনসংখ্যা সংক্রান্ত রিপোর্ট বিজেপির কাছে বড় ‘সেটব্যাক’ বলেই মনে করা হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গেরুয়া শিবিরের মুখের দাবিতে আর চিঁড়ে ভিজবে না, এবার বিরোধী পক্ষ কেন্দ্রের রিপোর্ট সামনে রেখেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়বে। প্রয়োজনে এই রিপোর্টকে ভিত্তি করে আইনি লড়াইয়ে যেতে পারবে তারা। পাশাপাশি, এটি বাংলায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী আন্দোলনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে রইল বলে মত প্রবীণ আমলাদের।
নীতি আয়োগের এই রিপোর্টের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাংলার সিংহভাগ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করলেও শহুরে অঞ্চলের বাসিন্দার সংখ্যা নেহাত কম নয়। ৩৬.৮ শতাংশ জনসংখ্যা শহর এলাকার। যা জাতীয় গড়ের তুলনায় সামান্য বেশি। জনসংখ্যা ঘনত্বেও বাংলা দেশের গড়ের তুলনায় অনেকটা আগে। নীতি আয়োগের এই রিপোর্ট আসার পর এবার শীঘ্রই শুরু হতে চলা সেন্সাসের দিকে তাকিয়ে বাংলার সমস্ত মহল।