সংবাদদাতা, ইসলামপুর: তদন্তের স্বার্থে ইসলামপুরের সেই শিশুশ্রমিককে কলকাতার রবীন্দ্রনগরে নিয়ে গেল পুলিস। শিশুটিকে নির্যাতনের পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। একমাসেরও বেশি সময় ধরে পরিবার ধন্দে ছিল, শিশুটি বেঁচে আছে, নাকি নেই! এই শিশুশ্রমিককে রবীন্দ্রনগরের আক্রা এলাকায় জিনস ওয়াশের একটি কারখানায় উল্টো করে ঝুলিয়ে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ এনেছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ মে আক্রার কারখানায় শিশুশ্রমিকের উপর অকথ্য নির্যাতনের ভিডিওটি সামনে আসে। ওই ঘটনার পর থেকে শিশুশ্রমিকের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। গোটা রাজ্যজুড়ে শুরু হয় আলোড়ন। বিস্তর খোঁজাখুঁজি চালিয়েও শিশুশ্রমিকের খোঁজ পায়নি পুলিস।
গত বুধবার ৪২ দিনের মাথায় হঠাৎ ইসলামপুরের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ঘটে সেই শিশুশ্রমিকের। পরিবারের দাবি, কলকাতা থেকে সে একাই বাড়ি ফিরেছে। এতে মামলায় নয়া মোড় এসেছে। গোটা ঘটনায় তৈরি হওয়া নয়া রহস্য ভেদ করতে তদন্তকারীরা শনিবার শিশুশ্রমিককে কলকাতায় নিয়ে যান। পুলিস সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনগর থানার পুলিস নাবালককে সেখানে আদালতে তুলবে। এরপর আদালতের নির্দেশে সিডব্লুসিতে কাউন্সেলিংয়ে পাঠানো হতে পারে। এরপর বিচারকের সামনে নাবালকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে।
তদন্তে নেমে নির্যাতিত শিশুর সন্ধান করতে পারেনি পুলিস। ফলে ব্যাহত হচ্ছিল তদন্ত। এবার সে হঠাৎ বাড়ি ফিরে আসায় চমকে গিয়েছেন তদন্তকারীরাও। বাড়ি ফিরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিস শিশুটিকে ইসলামপুর থানায় নিয়ে আসে। সেই রাতেই ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়। পুলিস কলকাতায় নিয়ে যেতে চাইলেও, পরিবার রাজি হয়নি। পরিবার নাবালককে বাড়ি নিয়ে যায়। দু’দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় সে। এই দুদিন সাদা পোশাকের পুলিসকর্মীরা ওই বাড়িতে নজরদারি চালিয়েছেন। শনিবার তাকে তদন্তের স্বার্থে কলকাতা নিয়ে যায় পুলিস। সঙ্গে গিয়েছে তার মা ও দাদা। নাবালকের কাকা বুধবার বলেছিলেন, রবীন্দ্রনগর এলাকার কারখানা থেকে পালিয়ে একটি দোকানে কিছু খাবার নিতে গিয়েছিল ভাইপো। সেসময় মানো নামের এক যুবক সেই দোকান থেকে ধরে নিয়ে যায়। একটি ঘরে বন্দি করে রাখে। গত মঙ্গলবার কোনও রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আক্রা স্টেশনে আসে ছেলেটি। সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে শিয়ালদহ এবং শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে চেপে কিষানগঞ্জে পৌঁছয় সে। সেখান থেকে হেঁটে বাড়ি আসে ছেলেটি। শনিবারও একই কথা বলেন নাবালকের কাকা। তবে কলকাতা থেকে একা বাড়ি ফিরে আসা, কিষানগঞ্জ থেকে প্রায় ৬০ কিমি পথ হেঁটে বাড়ি পৌছনোর বিষয়টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না পুলিস আধিকারিকদের একাংশ। এই নয়া রহস্য উদ্ঘাটনে এবার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।