বৌবাজার থেকে শিক্ষা নিয়ে জোকা মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননে বিশেষ সতর্কতা
আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
প্রায় ৪০ মিলিমিটার পুরু ইস্পাতের ক্যাপসুলে মোড়া টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ‘চণ্ডী’ বছর ছয়েক আগে এসপ্লানেড থেকে যাত্রা শুরু করে বড় কোনও বিপত্তি ছাড়াই এস এন ব্যানার্জি রোড, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট হয়ে দুর্গা পিতুরি লেনে পৌঁছেছিল। ওই লেন পেরিয়ে আর কিছুটা পথ এগোলেই বৌবাজার স্ট্রিট ধরে শিয়ালদহে পৌঁছে যেত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ খননের কাজে নিযুক্ত ওই টিবিএম।
কিন্তু জল-কাদা সর্বস্ব নরম মাটিতে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট রাতে আচমকাই টিবিএমের লেজের দিকের অংশ দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। লেজের দিকে থাকা তারের ব্রাশ ওই সময়ে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা জলের স্রোত রুখতেপারেনি। ব্রাশ বদলের তাৎক্ষণিক চেষ্টাও কাজে না আসায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। সদ্য তৈরি করা সুড়ঙ্গের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও ধুয়ে আসা মাটির কারণে একের পর এক বাড়ির ভিত আলগা হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। তড়িঘড়ি বাসিন্দাদের বার করে আনতে হয়। ওই অবস্থায় একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ে। পরে সুড়ঙ্গের জল রুখতে গিয়ে টিবিএম চণ্ডীকে সুড়ঙ্গেই বিসর্জন দিতে হয়। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের এ হেন বিপত্তি সামলে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
সেই বিপত্তি থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার জোকা-এসপ্লানেড মেট্রোপথে খিদিরপুর থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পর্যন্ত অংশে ১৭২৩ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খননের ক্ষেত্রে টিবিএম ‘দুর্গা’য় একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৯ মিটার দীর্ঘ ওই টিবিএমের একেবারে সামনের খননকারী অংশের সঙ্গে পরের দিকে যে সব অংশ যুক্ত করা হবে, সেই জোড়ের মুখে রবারের মতো ফোলানো যায়, এমন বিশেষ ধরনের সিল ব্যবহার করা হবে। মাটির গভীরে টিবিএম তার নিজের পরিধির চেয়ে কিছুটা বড় আকারের সুড়ঙ্গ খনন করে। খননের কিছু ক্ষণের মধ্যেই টিবিএমের সঙ্গে বসানো যন্ত্র কংক্রিটের টুকরো জুড়ে সুড়ঙ্গের রিং তৈরি করে ফেলে। ওই রিংয়ের বাইরের চার দিকের অংশ দ্রুত জমে যায়, এমন সিমেন্ট এবং রাসায়নিক দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। যাতে চার পাশে মাটির বসে যাওয়ার প্রবণতা রুখে দেওয়া যায়।
সুড়ঙ্গ খনন-পর্বে যন্ত্রের বাইরের আবরণের ফাঁক গলে যাতে কোথাও কাদা-মাটি ঢুকতে না পারে, সে জন্য ওই সিল কাজে আসবে। মাটির প্রকৃতির সঙ্গে তাল রেখে প্রয়োজন মতো ফুলে অথবা কিছুটা চুপসে গিয়ে জল আসার পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা।
এ ছাড়াও টিবিএমের লেজের দিকে টেল স্কিন গ্রিজ় (টিএসজি) লাইনিং তৈরি করার ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য জলরোধী বিশেষ রাসায়নিক পাম্প করার ব্যবস্থা থাকবে। সুড়ঙ্গ নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রের খবর, সদ্য নির্মিত সুড়ঙ্গের কংক্রিটের রিংয়ের উপরে ভর রেখে টানেল বোরিং মেশিন একটু একটু করে সামনের দিকে এগোয়। সুড়ঙ্গ খননের এই পর্বে রিংয়ের চারপাশ থেকে যাতে জল-কাদা টিবিএমের ভিতরে ঢুকে না আসে, তার জন্য যন্ত্রের লেজের দিকে থাকা ব্রাশ ঘেঁষে জলরোধী রাসায়নিকের বৃত্তাকার লাইনিং বসানোর ব্যবস্থা থাকছে। এর ফলে, সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে বিপত্তির আশঙ্কা অনেকটা কমবে। আপাতত এই প্রস্তুতির উপরে ভর করেই ময়দানের মাটিতে সুড়ঙ্গ খননের কাজে হাত দিচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।