পুরসভার ৩২৯ কোটি টাকার জল প্রকল্পের প্রধান বাধা জমির অভাব
আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
নতুন জল প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরির পরে খরচ অনুমোদন হয়েছে, নকশাও প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু এখন পুরসভার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথারকারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যথাযথ জমির অভাব। কারণ, জল প্রকল্প সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় যে সমস্ত বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত জমিই পাওয়া যাচ্ছে না।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমি খোঁজার জন্য পুর প্রতিনিধি ও পুরসভার কর্মীরা একসঙ্গে এলাকায় ঘুরে দেখছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বহু জায়গায় জমি পাওয়া যায়নি। ফলে প্রস্তাবিত দু’টি বড় জল পরিশোধন প্রকল্প কবে শেষ হবে, কবেই বা জমি-জটিলতার অবসান হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছেই।
পুরসভা সূত্রের খবর, ধাপায় একটি ২ কোটি এবং গড়িয়া স্টেশন রোডের কাছে একটি ১ কোটি গ্যালনের জল পরিশোধন প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। কেন্দ্রীয় ‘অম্রুত’ প্রকল্পের আওতায় এই কাজের জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩২৯ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, ধাপা প্রকল্পের জন্য ১১টি এবং গড়িয়া প্রকল্পের জন্য অন্তত ১৪টি নতুন বুস্টার পাম্প বসানো প্রয়োজন। এর মধ্যে গাঙ্গুলিবাগান, বিদ্যাসাগর কলোনি, আদর্শপল্লি, সর্দারপাড়া— এই চারটি জায়গায় নির্মাণ শুরু হয়েছে। নেহরু কলোনি, লুনা বেকারি, জীবনরতন ধর স্মৃতি উদ্যান, কাচ্চা ভিআইপি— এই চারটি জায়গায় নির্মাণের নকশা তৈরির কাজ চলছে এবংঅনুমোদনপত্র মিলেছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়ে গিয়েছে।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনিতে বাগবাজার মায়ের ঘাটে অবস্থিত ‘ইনটেক জেটি’ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি গ্যালন জল ধাপা জলপ্রকল্পের বর্তমান, পুরনো জল পরিশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এই ক্ষমতা আরও ২ কোটি গ্যালন বাড়াতে নতুন পাম্প বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সেই অতিরিক্ত জল পরিশোধন কেন্দ্রে পাঠানো যায়। ধাপার জল যাবে পিকনিক গার্ডেন, আর কে চ্যাটার্জি রোড, জগন্নাথ ঘোষ রোড, যাদবগড় মৈত্রী সঙ্ঘ, শিবতলা মাঠ, অজয়নগর-সহ বহু এলাকায়।
আবার গড়িয়া স্টেশন রোডের কাছে নির্মীয়মাণ কেন্দ্রের জন্য জল আসবে ভূতঘাট জল সংগ্রহ ঘাট থেকে। এই ঘাটের ক্ষমতা প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৫ লক্ষ গ্যালন। এখান থেকে কলকাতা পুরসভা, বারুইপুর ও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার জন্য অপরিশোধিত জল সরবরাহ করা হবে। পুরো প্রকল্পে পাইপ বসানোর খরচ ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর পরে তা সারাতে খরচ পড়বে আরও ৫৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ ৩২৯.৭৫ কোটি টাকা।
এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এই প্রকল্পের জন্য পুরসভা মোট ৯১টি আলাদা আলাদা কাজের দরপত্র ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
পুরসভার আশা, এই জল প্রকল্প চালু হলে বহু এলাকা ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর না করে পরিস্রুত পানীয় জল পাবে। তবে কবে এইপ্রকল্প শেষ হবে তা এখন নির্ভর করছে একটাই বিষয়ের উপর— জমি মিলবে তো?