কর্কট রোগে আক্রান্ত মানেই, সমাজ-পরিবার থেকে আলাদা হয়ে একাকিত্বে ডুবে যাওয়া নয়। জীবনে ইতি টানার চিন্তা নয়। বরং রোগকে জয় করে ফিরে আসার লড়াইতেও যে সাফল্য মেলে, সেই গল্পই শোনালেন কর্কট রোগ জয়ীরা। শনিবার নাটকের মঞ্চে বার্তা দিলেন, ‘এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।’
কর্কট রোগকে জয় করার পাশাপাশি, ফের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়া যায়।— এই বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই কলামন্দিরে এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল মেডিকা-অঙ্কোলজি। প্রায় ১৮ জন কর্কট রোগজয়ী পুরুষ-মহিলা অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে মঞ্চস্থ করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি ক্ষুদ্র-নাটক অবলম্বনে ‘রঙ্গ ব্যঙ্গ’। ‘আর্য ও অনার্য’, ‘অন্ত্যেষ্টি সৎকার’, ‘নূতন অবতার’, ‘অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি’ এবং ‘স্বর্গীয় প্রহসন’— নাটকগুলিকে এক সুতোয় বেঁধে নির্দেশকের ভূমিকায় ছিলেন অভিনেতা তথা নাট্যকার চন্দন সেন।
তাঁর কথায়, ‘‘কর্কট রোগে আক্রান্তদের সব থেকে বড় সমস্যা একাকিত্ব। আজও সমাজের একটা অংশ ওই অসুখকে ছোঁয়াচে মনে করেন। এই সব ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌরভ দত্ত এই পরিকল্পনা করেছিলেন।’’ দীর্ঘ অনুশীলনের পরে এ দিন জীবন ও সাহসের উদ্যাপন হল বলেই জানাচ্ছেন সৌরভ। আগামীতে জেলাতেও এই নাট্যানুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। সব চরিত্রেই কর্কট রোগে আক্রান্ত বা তা জয় করা মানুষদের দিয়ে অভিনয়ের চিন্তাভাবনাও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চন্দন। তিনি আরও বলছেন, ‘‘এই মঞ্চ কেবল ‘পারফর্ম’ করার জায়গা নয়, বরং আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার লড়াই।’’
একই সুর শোনা গেল ক্যানসার জয়ী অভিনেতা গৌতম রায়চৌধুরী, নীতা দত্ত, অমিতাভ সরকারদের গলাতেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘রোগ শরীরকে থামাতে চেয়েছিল, কিন্তু মনের কণ্ঠকে নয়। আর এই নাটক নিজেদের গল্প বলার সুযোগ করে দিল।’’ চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কর্কট রোগের চিকিৎসা শুধু শরীরের নয়, রোগীর মানসিক ও আত্মিক শক্তিকেও জাগ্রত করতে হয়। অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে রোগীদের সেই শক্তিই প্রতিফলিত হল।’’