• গ্রেফতারের সময়ে জানাতেই হবে কারণ, তৈরি হচ্ছে কার্যবিধি
    আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগে, কী কারণে তাঁকে ধরা হচ্ছে, তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে আগেই নির্দেশ জারি করেছিল আদালত। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা সেই নির্দেশ অমান্য করায় কয়েকটি ক্ষেত্রে ধৃত অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে আদালত। একটি বা দু’টি নয়, পর পর অনেকগুলি মামলাতেই পুলিশের এই গাফিলতির জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কারণ না জানানোয় আদালতে তিরস্কৃতও হতে হয়েছে পুলিশকে। বার বার ঘটে চলা এই ভুল ঠেকাতে রাজ্য পুলিশকর্মীদের জন্য এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) বা কার্যবিধি তৈরি করতে চাইছেন পুলিশকর্তারা।

    সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই কার্যবিধি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শীর্ষ কর্তাদের ছাড়পত্র পেলেই তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। ভবানী ভবনের পুলিশকর্তাদের আশা, কার্যবিধি তৈরি হয়ে গেলে তদন্তকারী অফিসারেরা কোন মামলায়, কেন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা যেমন জানিয়ে দেবেন, তেমনই গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের মনোনীত কোনও ব্যক্তিকেও লিখিত ভবে সেই গ্রেফতারের কারণ জানাবেন। আর তা করা গেলে এই কারণে আদালত থেকে জামিন পাওয়াও আটকানো যাবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

    বিএনএসএসের ৪৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কারণ না জানিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। চলতি বছরে দেশের শীর্ষ আদালত গ্রেফতারের কারণ না জানিয়ে অভিযুক্তকে ধরার একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছিল, কারণ জানানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি বাধ্যতামূলক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এই নিয়ম মানা না হলে তা মৌলিক অধিকার হরণের শামিল বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, কাউকে গ্রেফতার করার আগে কারণ উল্লেখ করে অভিযুক্তের কোনও আত্মীয়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানোর জন্য ভবানী ভবনের তরফে বিভিন্ন জেলা, কমিশনারেটের পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। কিন্তু তা-ও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সেই নিয়ম না মানার জন্য ধৃতের জামিন হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাই পুলিশকর্তারা এ বার পুরো কার্যবিধি তৈরি করে তা তুলে দিতে চাইছেন বাহিনীর তদন্তকারীদের হাতে।

    তবে, পুলিশকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার সময়ে কারণ লিখিত আকারে দেওয়া সম্ভব হয় না। গ্রেফতারের সময়ে পরিস্থিতিও অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের অনুকূলে থাকে না। তাই গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পরে তার কারণ বিবৃত করে নোটিস দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের একাধিক থানায় কাজ করা এক অফিসারের কথায়, ‘‘কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার সময়ে যত দ্রুত সম্ভব আমরা অভিযুক্তকে পাকড়াও করে এলাকা ছেড়ে চলে আসি। যাতে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি না হয়। ফলে, সেখানে ওই গ্রেফতারের কারণ লিখিত আকারে কাউকেই দেওয়া সম্ভব হয় না।’’

    পুলিশকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, আইন বা আদালতের যা নির্দেশ আছে, তা মেনেই চলতে হবে বাহিনীর সদস্যদের। তার জন্যই ওই কার্যবিধি তৈরির চেষ্টা চলছে। যা অমান্য করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)