• যাবজ্জীবন থেকে বেকসুর খালাস
    আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • বধূহত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল শ্বশুর, ভাসুর এবং জায়ের। ছ’বছর পরে নিম্ন আদালতের সেই রায় উল্টে গেল কলকাতা হাই কোর্টে। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি ওই তিন জনকেই বেকসুর ঘোষণা করে জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, প্রমাণের অভাবে নিম্ন আদালতের রায় এ ক্ষেত্রে বহাল রাখা যায়নি। প্রমাণের অভাব থাকায় নিম্ন আদালতের রায় ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলেই মনে করেছে হাই কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, নিম্ন আদালতের রায় অনুসারে জমা দেওয়া জরিমানার টাকাও ফেরত পাবেন তিন জন।

    আদালতের খবর, বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বাসিন্দা টুম্পা মল্লিকের বিয়ে হয়েছিল গণেশ মল্লিক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। টুম্পার বাবার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর মদন মল্লিক, ভাসুর তপন মল্লিক এবং তপনের স্ত্রী রানু মল্লিক টুম্পার উপরে অত্যাচার করতেন। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই টুম্পাকে মারধর করা হয়। পরে টুম্পার বাবা খবর পান যে তাঁর মেয়েকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। টুম্পা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাবা-মায়ের কাছে থাকতেন। সে সময়ে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। এই ঘটনায় পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে চার্জশিট দেয় এবং বিষ্ণুপুর আদালত ২০১৯ সালে তিন জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।

    হাই কোর্টে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী মৈনাক বক্সীর বক্তব্য, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে পোড়া ঘায়ে সংক্রমণের জেরে টুম্পা মারা যান। প্রথম বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর জবানবন্দিকে পুলিশ মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। অথচ তিনি দ্বিতীয় বার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১০ দিন জীবিত থাকলেও জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। ওই জবানবন্দি পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নথিবদ্ধ করা হয়নি। তাঁর দাবি, বয়ানে কী বলতে হবে, তা টুম্পার মা শিখিয়ে দেন। টুম্পার বাবা অভিযোগে যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে কোর্টে সাক্ষী হিসেবে দেওয়া বয়ানেরও মিল নেই।

    রাজ্যের কৌঁসুলি রিনা মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি ছিল, এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। টুম্পার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি এবং সাক্ষীদের বক্তব্যের মিল পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া, আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর আগের বক্তব্য প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মৃত্যুকালীন জবানবন্দির ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর মানসিক সুস্থতা এবং অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ও বিবেচ্য। কেন কোনও ম্যাজিস্ট্রেটকে জবানবন্দি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছে কোর্ট। ওই জবানবন্দি ছাড়া অন্য কোনও জোরালো প্রমাণ পুলিশ আদালতে পেশ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)