সরকারি জমি জবরদখলমুক্ত করতে এ বার ছাড়পত্র দিল রাজ্য। বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি পুরসভা, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে নবান্ন জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি জমি লিজ় বা বিক্রির চেষ্টা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ঘটনাচক্রে, জমি জবরদখল মুক্ত করতে সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষও কিছু পদক্ষেপ করেছেন। অথচ সেই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে ‘কোদাল-কাটারি’ নিয়ে উচ্ছেদ ঠেকানোর নিদান দিয়েছেন শাসক দলেরই এক বিধায়ক।
অতীতে একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি জমি বেহাত হওয়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও, ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরটি তাঁর হাতেই আছে। পড়ে থাকা সরকারি জমি কাজে লাগাতে সরকারি স্তরে একটি কমিটিও গড়েছিল রাজ্য। সেই কমিটির কাজ ছিল, পড়ে থাকা সরকারি জমিগুলি চিহ্নিত ও একত্রিত করার প্রস্তাব দেওয়া। ঠিক হয়েছিল, সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ওই জমি শিল্প বা শিল্পতালুক গড়ার কাজে সরকার ব্যবহার করবে। তবে সেই পদক্ষেপের পরে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও জবরদখলের ছবি খুব বদলায়নি বলেই প্রশাসনের একাংশের দাবি। তাদের আরও বক্তব্য, এ বার জমি জবরদখলমুক্ত করতে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত মিলেছে। কিছু দিন আগে সেচ দফতর তাদের একটি জমি জবরদখল মুক্ত করতে অর্থ বরাদ্দও করেছে। সেচ দফতর সূত্রের বক্তব্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ ব্লকে তাদের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে ছিল। সম্প্রতি জয়নগর সেচ ডিভিশনের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে তা দখলমুক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে দফতর।
প্রসঙ্গত, জমির ব্যাপারে পদক্ষেপ করেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরও। প্রত্যেকটি দফতর, স্বশাসিত সংস্থা, পুরসভা, পঞ্চায়েতের উদ্দেশে তাদের নির্দেশ, সরকারি জমি বিক্রি করতে হলে বা লিজ় দিতে গেলে সরকারের বিধি মানতেই হবে। ভূমি এবং অর্থ দফতরের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এবং সর্বোপরি রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে তবেই তেমন জমি বিক্রি করা বা লিজ় দেওয়া যাবে। ভূমিদফতর জানিয়েছে, তাদের কাছে জমা পড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং স্বশাসিত সংস্থা সরকারের অনুমোদন না নিয়েই সরকারি জমি বিক্রি করছে বালিজ় দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আধিকারিকদের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন যে বহু জমি বেহাত হয়ে থাকায় সেগুলিকে সড়ক বা পরিকাঠামো তৈরি অথবা শিল্পের প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারি জমি বেহাত হওয়া ঠেকাতেই পদক্ষেপ করতে চাইছে নবান্ন। সূত্রের দাবি, তাঁদের জমি দখলমুক্ত করতে রেল কর্তৃপক্ষও অতীতে একাধিক বার রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কারণ, রেলও পরিকাঠামো বাড়ানো, সংস্কার বা উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রেলকে সহযোগিতার বার্তাও দিয়েছিল রাজ্য। সম্প্রতি হুগলি জেলার ব্যান্ডেল স্টেশন লাগোয়া জমি থেকে ‘দখলদার’ হটাতে নোটিস দিয়েছিল রেল। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে ঝাঁটা-লাঠি হাতে মিছিল করেছিলেন ওই জমিতে বসবাসকারী এবং ব্যবসায়ীরা। বিধায়ক বলেছিলেন, “কোদাল-কাটারি নিয়ে উচ্ছেদ ঠেকাবেন আপনারা।...সাধারণ মানুষ রেলের জমিতে থাকতে না পারলে রেলকর্মীরাও রাজ্যের পুর ও পঞ্চায়েত এলাকায় থাকতে পারবেন না।” রেলের উচ্ছেদের নোটিস পুড়িয়েও দিয়েছিলেন বিধায়ক।