• জোকায় ‘নির্যাতন’-কাণ্ডে বিক্ষোভ, তোপ তৃণমূলের
    আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে এ বার জোকায় কেন্দ্রীয় সরকারের ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন নির্যাতনে’র অভিযোগ। আর সেই ঘটনা নিয়েও রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতে শুরু করল শহরে। তবে অভিযোগকারিণীর বাবার ‘অন্য রকম বক্তব্য’ সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলেও দাবি করেছে নানা পক্ষ। এই প্রেক্ষিতে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ও বামেরা।

    ওই অভিযোগের পরেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তার থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। অধিকর্তাকে বলেছি, আমাকে রিপোর্ট দিতে।” কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগ উঠলেও তার জন্য রাজ্যের সামগ্রিক অবস্থাকেই নিশানা করে সুকান্ত আরও বলেছেন, “একটা পাত্রের মধ্যে আলাদা করে কিছু রাখা যায় না। বাংলায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এখানে বহিরাগতেরা কেউ কিছু করেনি, ক্যাম্পাসে থাকা এক জন এমনটা ঘটিয়েছে!” তবে এর মধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “কেউ মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে এমন ঘটনা ঘটালে, তা দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কিছু দাগিয়ে দেওয়া হলে সেটা বাংলা, বাঙালির পক্ষে অসম্মানের। এখনই মন্তব্য করা ঠিক নয়।”

    ঘটনার সূত্রে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জবাব’ চেয়ে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “রাজ্য সরকারের আর জি কর, আইন কলেজ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান— বাংলায় বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রী এই বারে কি বলবেন, বার বার রাজ্যে কেন এমনটা ঘটছে? আসলে রাজ্য সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, এটা নির্যাতনকারীদের মুক্তাঞ্চল।”

    এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “একটি ঘটনার পর পরই সেটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার থেকে সমাজ অনেক বড় বিষয়। ঘটনাটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তা থাকা উচিত ছিল।” তাঁর সংযোজন, “মেয়েটির বাবা বলছেন, নির্যাতন হয়নি। আগে বিরোধীরা বলেছিল, ‘কিছুই ঘটেনি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল পরিবারকে।’ এখন বলা হচ্ছে, ‘তৃণমূল লিখতে বাধ্য করেছে যে কিছু ঘটেছে!’ যখন মেয়েটির বাবা বলছেন কিছু ঘটেনি, তখন সেটা তাঁদের ব্যাপার।”

    ‘নির্যাতনে’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর পথের প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের ডাকে জোকা ব্রিজে জমায়েত করে মিছিল ও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। ‘দোষী’র শাস্তির দাবিতে হরিদেবপুর থানায় এসইউসি-র ছাত্র, যুব ও মহিলারাও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ঘটনার পরেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, শৈবাল রায়, দোলন দাস, সৌমেন বিশ্বাস, অভিজিৎ রাহা, অয়ন মিত্রেরা। তাঁদের লালবাজারে নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। নেতৃত্বের গ্রেফতারি এবং নির্যাতন-কাণ্ডের প্রতিবাদে হরিদেবপুর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ-সহ অন্যেরা। নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, “সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ-প্রশাসন বলুক, আসলে কী ঘটেছে। কারণ, এমন একটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক খবর সামনে এলে, ভবিষ্যতে সেখানে ছাত্রীরা ভর্তি হতে আতঙ্কিত হবেন। অভিযোগকারিণীকে হুমকি বা চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা দরকার।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)