তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ও কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে চলা ‘ছায়াযুদ্ধে’ সমিতির কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। শংসাপত্র না মেলা, স্থায়ী সমিতির বৈঠক নিয়মিত না হওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। সমিতির তিন কর্মাধ্যক্ষ কাজের পরিবেশ নষ্ট করছেন দাবি করে প্রশাসনে নালিশ ঠুকেছেন সমিতির সভানেত্রী ময়না হালদার টুডু। কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের পাল্টা দাবি, মন্তেশ্বরের মতো পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন সভানেত্রী। তবে দু’পক্ষই মেনে নিচ্ছে, এ সবের ফলে সমিতির কার্যালয়ে ছোটখাট কাজে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে মানুষকে। শনিবার স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী দাবি করেন, সভানেত্রীর বিরুদ্ধে কর্মাধ্যক্ষ, সদস্যেরা অনাস্থা আনতে চাইছেন।
মন্তেশ্বরে গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর উপরে ‘হামলার’ পর থেকেই সক্রিয় তাঁর বিরোধীরা। মেমারি ২ ব্লকের সভানেত্রী স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মন্ত্রীর অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির ন’জন কর্মাধ্যক্ষ ময়নার পদত্যাগ চেয়ে মেমারির সাতগেছিয়ায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বুধবার মেমারি থানায় ময়নার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কর্মাধ্যক্ষেরা। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মন্ত্রীকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন সমিতির সভানেত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
এ দিন সিদ্দিকুল্লা দাবি করেন, ওই নেত্রীর স্বামী আরএসএস সদস্য। তাঁর কথায়, “এই তথ্য কয়েক দিন আগে জেনেছি। সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে থাকব, আবার ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষক তৃণমূলের কাছেও থাকব, তা হয় না।” ময়নার পাল্টা দাবি, “এলাকার প্রবীণ তৃণমূল নেতারা জানেন, আমার স্বামী কোন দল করতেন। পঞ্চায়েত গঠনের আড়াই বছর পরে পরিবারকে টেনে মিথ্যা অভিযোগ করার অর্থ কী? আর অনাস্থার বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। দলই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
শুক্রবার বিকেলে মৎস ও প্রাণীসম্পদ দফতরের স্থায়ী সমিতির বৈঠক ছিল। ময়না ও কর্মাধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় তা বাতিল হয়। কর্মাধ্যক্ষ মুকুল সাহার অভিযোগ, “ময়নার সঙ্গে লোক নেই। মন্তেশ্বরের গরম হাওয়া গায়ে মেখে মেমারি ২ ব্লককে উত্তপ্ত করতে চাইছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ভিতরে ছায়াযুদ্ধ শুরু করেছেন। আমাদের ব্লককে অশান্ত হতে দেব না। এ সবের জন্য উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, সমিতিতে ‘দ্বন্দ্বের’ জেরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থ খরচ থমকে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে ৪৯ লক্ষ টাকা পেয়েছিল সমিতি। মাস খানেক আগে পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশের মতো টাকা খরচ করা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত অগ্রগতি তেমন হয়নি।
ময়নার অভিযোগ, “আমি পদে বসার পর থেকে কয়েক জন কর্মাধ্যক্ষ অসহযোগিতা করছেন। তাঁরা দফতরে আসেন না। মানুষ তাঁদের না পেয়ে ফিরে যান। আমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। এ সব কারণে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। ওঁরা আমার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছেন।” প্রশাসনের কাছে তিন কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। ময়নার অভিযোগ, ‘‘অশান্তি তৈরি করে কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে।’’ তিন কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে মুকুলের পাল্টা দাবি, “ময়নাই কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে। অকারণে কর্মাধ্যক্ষদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। তাই কেউ যেতে চাইছেন না।”
মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির দাবি তুলেছেন সিদ্দিকুল্লা। তিনি জানান, এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কথা হয়েছে। পুলিশের তরফে লিখিত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে তাঁকে।