আবহাওয়ার খেয়ালিপনায় তরাই এবং ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে উৎপাদন মার খেতে বসেছে। গত জুন মাস থেকে এক দিকে বৃষ্টি কম, গরম বেশি। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। সেই সঙ্গে রোগপোকা, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের জেরে ব্যাপক হারে বাগানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি মালিকপক্ষের।
তরাইয়ের ৪১টি বড় বাগান এবং ছোট বাগানগুলিতে কমবেশি এই চিত্র বলে দাবি একাধিক মালিক সংগঠনের। মালিকপক্ষের দাবি, জুন এবং জুলাই মাসে এখনও পর্যন্ত দেখা হলে, গত বছরের তুলনায় উৎপাদন মার খেয়েছে ১০-১২ শতাংশ। বছরের হিসাবের বিচারে তা ৬ শতাংশ। অন্য দিকে, সার্বিক ভাবে ডুয়ার্সে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত চা উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে জয়ন্তী এলাকায়। তার পরেই দলগাঁও, ডামডিম, চালসা এবং নাগরাকাটার বাগানগুলিতে চা পাতার ক্ষতি হয়েছে।
চা গবেষণা কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ডুয়ার্সে তাপমাত্রা জুন মাসে বেশি ছিল। সে কারণেও চায়ের ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে বৃষ্টির। গত বছর জুন মাসে ২৫ দিন বৃষ্টি হয়েছিল। চলতি বছরে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৮ দিন। তাও অনেক কম পরিমাণে। গত বছর প্রায় ১২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেখানে চলতি বছরে সাড়ে পাঁচশো মিলিমিটারও ছুঁতে পারেনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এ সময়ে ৫০ শতাংশের মতো।
তরাইয়েও বৃষ্টির হাল একই। রোগপোকার আক্রমণও বেড়েছে। চা গবেষণা কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, লাল মাকড় থেকে শুরু করে ছয় ধরণের অত্যন্ত ক্ষতিকারক রোগপোকার সংক্রমণ হয়েছে। চা গবেষণা কেন্দ্রের এক বিজ্ঞানীর কথায়, “আবহাওয়ার রকমফেরই চা উৎপাদনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। হঠাৎ হঠাৎ ভোল বদলে ফেলছে আবহাওয়া। আমরা উপায় খুঁজছি।” শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের যুগ্ম অহ্বায়ক জিয়ায়ূল আলম বলেন, ‘‘চা বাগানের পাতা তোলার সময় বেঁধে দেওয়ার মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ভ্রান্ত নীতির জন্য বাগানের উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। শুধু আবহাওয়া দায়ি নয়। তা ছাড়া এক-এক বাগানের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ কী মানের চা উৎপাদন করেন, সেই বিষয়টি জড়িত। সব বাগানে উৎপাদন মার খাচ্ছে বলে মালিকপক্ষ বোনাসের সময় আসার আগে বলা শুরু করলে তা মানা যায় না।’’
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের তরাই শাখার সম্পাদক রানা দে-র কথায়, ‘‘এক দিকে বৃষ্টি কম। পাতার মান নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে রোগ পোকা, ব্যাকটেরিয়ার হানা। তাতে উৎপাদন মার খাচ্ছে।’’ একই সুরে জুন মাস থেকে বাগানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের সম্পাদক সুমিত ঘোষ।