তৃণমূল নেতা রাজ্জাক খানকে খুনের ঘটনায় এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। কারা রাজ্জাককে খুন করল, তা নিয়েও অন্ধকারে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ বিজয়গঞ্জ বাজারে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক সেরে নিজের বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন রাজ্জাক। বিজয়গঞ্জ বাজারের অদূরে ভাঙড় খালপাড়ের রাস্তায় শিরীষতলায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করে। উত্তর কাশীপুর থানা ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের চারটি থানা, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ, গুন্ডা দমন শাখা-সহ পুলিশের নানা বিভাগ তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক দল।
শনিবার ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল প্রোটেকশন সেকশনের (টেকনিক্যাল) একটি দল। তারা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে। ইতিমধ্যে দুই পঞ্চায়েত স্তরের নেতা ও সদস্যকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা হেঁটে এসেছিল। খুনের ঘটনার পরে হেঁটেই জঙ্গল পেরিয়ে মেছোভেড়ির আল ধরে চকমরিচা গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে। খুনের রাতে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের কুকুর ঘটনাস্থলের গন্ধ শুঁকে জঙ্গলের মধ্যে মেছোভেড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। তা থেকে পুলিশের অনুমান, খুনের পিছনে গ্রামের কোনও ব্যক্তিও জড়িত থাকতে পারে। রাজ্জাককে যারা খুন করেছে, তারা পেশাদার খুনি, যাদের সুপারি দিয়ে আনা হয়েছিল বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা।
রাজ্জাক খুন হওয়ায় কাদের লাভ হবে, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে। সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার রাতে দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকে একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্জাক। সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা উপরে ওঠার পরে নেমে আসেন। মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যান।
ভাঙড় ডিভিশনের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে না। আশা করছি, দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’
শনিবার সকালে রাজ্জাকের বাড়িতে ভিড় জমান দলীয় নেতা-কর্মীরা। দুপুরের দিকে আসেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লা। রাজ্জাকের মৃত্যুর পরে শোকে স্তব্ধ তাঁর স্ত্রী খাদিজা বিবি। সওকাতের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘আমার দুটো বাচ্চা, তার উপরে আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। এই পরিস্থিতিতে কে আমাদের দেখবে, সংসার কী ভাবে সামলাব, কী ভাবেই বা বাচ্চাদের মানুষ করব!’’
সওকাত পরে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজ্জাকের স্ত্রীকে রাজ্য সরকারের সহায়তায় গ্রুপ ডি পদে চাকরি দেওয়া হবে। আগামী সোমবারের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র জমা করতে বলা হয়েছে।’’