• প্রতি ২৫ লক্ষে একটিই এই ধরনের শিশু জন্মায়, বিরল শিশুর জন্মের সাক্ষী থাকলেন বর্ধমানের এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা...
    আজকাল | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অদ্ভূত দর্শন একটি শিশুর জন্ম হল পূর্ব বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শিশুটির একটাই মাথা। কিন্তু চারটি হাত ও চারটি পা। প্রসূতির আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষায় বিষয়টি সামনে আসে। এরপর অস্ত্রোপচার করে প্রসব করান হাসপাতালের সিনিয়র গাইনি সার্জন ডাঃ কৃষ্ণপদ দাশ। তবে শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। 

    এ বিষয়ে প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ সিং বলেন, 'যমজ হলেও এক্ষেত্রে দু'জনের মাথা এবং বুক দুটোই একসঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। যার অর্থ এদের 'ব্রেইন' একটি। ব্রেইন আলাদা করা সম্ভব নয়। চিকিৎসার ভাষায় এই ধরনের শিশুকে বলে 'ক্রেনিওপ্যাগাস'। এরা একটিমাত্র 'এগ' থেকে জন্মাচ্ছে বলে আলাদা আলাদা শরীর নিয়ে জন্মায় না। খুবই বিরল। প্রতি ২৫ লক্ষের মধ্যে একটিমাত্র এই ধরনের শিশু জন্মায়।' 

    এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটালজি বিভাগে কর্মরত এবং রাজ্যের আরেক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শুভজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, 'অতীতে এই ধরনের শিশুর জন্মের রেকর্ড থাকলেও বিষয়টি কিন্তু বিরল।' 

    আরও পড়ুন: রাস্তার এ কী দশা! পাত্রীর বেনারসি কাদায় মাখামাখি, গ্রামবাসীদের কাঁধে চাপলেন পাত্র, বিরক্ত হয়ে বিয়ের আসরেই গেল না বরযাত্রী

    জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট থানার শাহাজাদপুরের একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে তাঁর স্বামী ভাতার বাজারের কদমতলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। মায়ের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষায় গর্ভে যমজ ভ্রুনের অস্তিত্ব ধরা পড়লেও দেখা যায় শিশুদুটির একটিই মাথা। আলাদা আলাদা দুটি হাত ও দুটি পা। সেইসঙ্গে দেখা যায় মাথায় একটি টিউমার। যা ঝুঁটির মতো ঝুলছে। শনিবার দুপুর দুটো নাগাদ প্রসূতির সিজার করা হয়। জন্মের পরে পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়।

    এবিষয়ে ডাঃ কৃষ্ণপদ দাস বলেন, 'এই ধরনের শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বেঁচে থাকার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। উপরন্তু প্রসূতির যদি গর্ভাবস্থা অব্যাহত থাকত তাহলে তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিতে পারত। সেজন্যই প্রসূতিকে বাঁচাতে আমরা ভ্রুণ 'টার্মিনেট' করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।' ওই বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজার বাপি পাকড়ে বলেন, 'যেদিন থেকে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু সেদিন থেকে আমি আছি। এরকম ঘটনার মুখোমুখি কখনও হইনি।' 

    গত মে মাসে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে জন্ম নিয়েছিল অবিকল মৎস্যকন্যার মতো দেখতে একটি শিশু। যার কোমড়ের নিচ থেকে দুটি পা একসঙ্গে জোড়া লাগানো। দুটি পায়ের পাতা এমনভাবে যুক্ত যা দেখলে মাছের লেজ বলে মনে হবে। যদিও ওই শিশুটিকেও বাঁচানো যায়নি। এই শিশুটির বিষয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এটা হল 'মারমেইড সিনড্রোম'। এই ধরনের সিনড্রোমের পিছনে যে কারণ থাকে তা হল রক্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। যার জন্য এই ধরনের শিশুর জন্ম হতে পারে। এবিষয়ে চিকিৎসকদের মত, ভালো করে খোঁজ নিয়েই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। 

    এর পাশাপাশি আরও যে কারণে এই মারমেইড সিনড্রোমের শিশু জন্মাতে পারে সে বিষয়ে প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস জানান, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ঘনঘন এক্সরে করার ঝোঁক। এক্সরে থেকে যে রেডিয়েশন বেরোয় তার থেকে গর্ভস্থ শিশুর চরম ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় কোনো শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাওয়া। যার থেকেও তৈরি হতে পারে সমস্যা।
  • Link to this news (আজকাল)