• বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার শ্রমিককে হেনস্থা, প্রতিবাদে সরব তৃণমূল, চুঁচুড়ায় বিরাট মিছিল...
    আজকাল | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে তৃণমূলের বিরাট মিছিল। আজ, রবিবার চুঁচুড়া পিপুলপাতি মোড় থেকে ঘড়ির মোড় পর্যন্ত তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। 

    ওড়িশায় বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে হেনস্তা করা হয়েছিল হুগলির পরিযায়ী শ্রমিক দেবাশিস দাসকে। তাঁকে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন তৃণমূল বিধায়ক সহ কর্মী, সমর্থকরা। যোগ দিয়েছেন স্থানীয় অগণিত মানুষ। সকলেই এদিন প্রতিবাদে সরব হন। 

    বিধায়ক অসিত মজুমদারের অভিযোগ, 'বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে হেনস্তা করা হচ্ছে। একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যেটা বিরোধী কাজ।পশ্চিমবঙ্গে অনেক ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। ভারতবর্ষে নানা ভাষা নানা মত আছে। সেখানে শুধু বাংলায় কথা বললে, বাঙালি হলে, তাঁকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে। তার বিরুদ্ধে মানুষকে এক হতে হবে।' 

    আরও পড়ুন: মানুষের মতো আচরণ লেপার্ডের! খাবারের খোঁজে দু'পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, বিরল দৃশ্য ধরা পড়ল কোথায়?

    তৃণমূল বিধায়ক আরও বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত পরিচয় শ্রমিক আছেন, তাঁদের পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শ্রমিকদের আর চিন্তা করার কোনও দরকার নেই।' 

    প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি সন্দেহে আটক ওড়িশায়। চরম হয়রানির শিকার হুগলির পরিযায়ী শ্রমিক। যাবতীয় প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও চলে চরম হেনস্থ। অনেক কষ্টে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরলেন রবীন্দ্র নগরের দেবাশিস দাস। জানালেন হয়রানির কথা। 

    জানা গেছে, ওড়িশার ঝারসুগুডা জেলায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়। কাজে ওড়িশায় গিয়েছিলেন জুন মাসের ১৪ তারিখ। এক সংস্থার সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন হুগলির চুঁচুড়া ২ নং রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা দেবাশিস দাস। শুধু তিনি এক ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন। তাঁরা ওই সংস্থার ওড়িশায় চলা বিভিন্ন প্রজেক্টের ফায়ার সিস্টেমের কাজ করেন। 

    দেবাশিসের অভিযোগ, ওই দিন কাজের জায়গায় পৌঁছনো মাত্রই বিনা কারণে তাঁকে আটক করা হয়। তারপর ওড়িশার স্থানীয় পুলিশের দ্বারা চরম হয়রানির শিকার হন তিনি। আটক করার পর তাঁদের কাজের জায়গা থেকে তুলে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। কী কী ডকুমেন্ট আছে, তা দেখতে চাওয়া হয়। 

    দেবাশিসের কাছে পাসপোর্ট, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, জন্মের শংসাপত্র সহ স্কুলের মাধ্যমিকের এবং পুলিশ ভেরিফিকেশান সার্টিফিকেট সবই ছিল। তিনি সেই যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দেখান। কিন্তু কোনও লাভ হয় না। ওই আধিকারিকরা তাঁর কাছে থাকা সরকারি পরিচয়পত্রকে কোনও গুরুত্ব দেন না। সেগুলো দেখার পড়ে ছাড়া তো দূরের কথা, উল্টে তাঁর ফোন কেড়ে নেন। তারপর থেকে বাড়িতে পরিজনদের সঙ্গে বা সংস্থার ঠিকাদারের সঙ্গেও কোনও কথা তাঁকে আর বলতে দেওয়া হয়নি। 

    যোগাযোগ নেই। এদিকে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে দেবাশিসের পরিবার। টানা কয়েকদিন ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা বিভা দাস। দেবাশিসের অভিযোগ, শুধু মাত্র বাংলার বাসিন্দা বলায়, বাংলাদেশি সন্দেহে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। শুধু তাঁর সঙ্গে নয়, বাংলা থেকে যাওয়া এমন একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে একই ব্যবহার করা হয়। 

    অবশেষে শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরে আসেন ওই পরিযায়ী শ্রমিক। এদিন দেবাশিস আরও জানান, তিনি দেশের মধ্যে ১৪ টা রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে কাজে গিয়েছেন। অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে কখনও পরতে হয়নি। এরপর কী হবে, তিনি জানেন না। কারণ বাইরের রাজ্যে কাজে যেতে তিনি ভয় পাচ্ছেন। আবার এটাও ভাবছেন, কাজে না গেলে সংসার চলবে কী করে। 
  • Link to this news (আজকাল)