• বীরভূমে তৃণমূল নেতাকে গুলি করে হত্যা, দুই মহিলা সহ আটক তিন জন
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • বীরভূমের লাভপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক অঞ্চল সভাপতি পীযূষ ঘোষকে (৪২) গুলি করে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। শনিবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরোনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে তাঁদের মধ্যেই একজন পীযূষ ঘোষকে ফোন করে ডেকেছিলেন ৷ কেন কী প্রয়োজনে ফোন করেছিলেন, তা জানতে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

    তৃণমূলের অভিযোগ, চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ তো অস্ত্র ব্যবহার করে না। খুনের প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আমোদপুরের শ্রীনিধিপুর এলাকার কোমরপুর গ্রামে। নিহত পীযূষ ঘোষ স্থানীয় তৃণমূল সংগঠনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তিনি তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পদে থাকার পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ২টো নাগাদ একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে পীযূষের কাছে। ফোন পাওয়ার পরই বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথার পিছনে গুলি করা হয়। গুলি মাথা ভেদ করে সামনের দিকে বেরিয়ে যায়। এর আগে ভোটের সময় বাড়িতে চিরকুট পাঠিয়ে নেতা ও তাঁর ছেলেকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। মৃতের স্ত্রীর দাবি, ‘বারবার বলেছিলাম রাজনীতি থেকে সরে এসো। দুই ছেলে নিয়ে ভয়ে আছি। ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করা হোক।’

    স্থানীয়দের মতে, পীযূষ ঘোষ এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি বালির ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। এই খুনের পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত শত্রুতা, অথবা ব্যবসায়িক বিরোধ—সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরিবারের দাবি, পীযূষ দলের দায়িত্বে ছিলেন। অঞ্চল সভাপতি হয়েছেন। তাঁকে সেই জায়গা থেকে সরাতে রাজনৈতিক কারণে খুন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে সাঁইথিয়া থানার পুলিশ।

    পুলিশ ইতিমধ্যে তিন জনকে আটক করেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মৌসুমি মাল নামের এক মহিলা, যিনি স্থানীয়ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাকি দু’জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গোটা অঞ্চলজুড়ে থমথমে পরিবেশ। বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, ঘটনায় তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

    লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের অঞ্চল সভাপতি পীযূষ ঘোষকে রাতে গুলি করে খুন করা হয়েছে। ভোর সাড়ে ৩টে-৪টে নাগাদ আমরা খবর পাই। সাঁইথিয়া ১ ব্লক, ২ ব্লকের সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, যুব সভাপতি, সকল অঞ্চল সভাপতি— আমরা সকলে এখানে এসে পৌঁছেছি। দেহের ময়নাতদন্ত হবে। যে অস্ত্র দিয়ে ওঁকে খুন করা হয়েছে, সেটা কোথা থেকে কী ভাবে এল, কারা নিয়ে এল, পুলিশের উপর আমাদের আস্থা আছে। পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে বার করবে। এটা দুষ্কৃতীদের কাজ। কেন খুন করা হল, কারা দুষ্কৃতী পাঠাল, এটা তদন্ত হলেই জানা যাবে। পুলিশকে সব রকমের সহযোগিতা আমরা করব।’

    রবিবার দুপুরে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ মৃতের বাড়িতে যান। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। নিহতের স্ত্রী, মা, বড় ছেলে এবং 88 বছরের দাদুর সঙ্গে কথা বলেন কাজল। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।

    এর আগে গত বৃহস্পতিবারই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান তৃণমূল নেতা রাজ্জাক খাঁ। মালদহতেও দিন কয়েক আগে এক তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন করা হয়। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার কয়েক মাস আগে তিনদিনে ৩ তৃণমূল নেতা-কর্মীর খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)