তৃণমূল বিধায়কের শিক্ষা-তথ্যে কারচুপি? নথি দেখিয়ে আক্রমণ সুকান্তর, ‘ছাপার ভুলের দায়িত্ব আমার নয়’, বললেন লাভলি
আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
তৃণমূল বিধায়কের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে ‘অসঙ্গতি’র অভিযোগ। ‘ডিগ্রি’ সংক্রান্ত তথ্য অপরিবর্তিত থাকলেও, তিন জায়গায় কলেজের নাম তিন রকম। তা নিয়ে রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক লাভলি (অরুন্ধতী) মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা এই ‘কারচুপি’র অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দিলেন রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রসঙ্গকে। জবাব দিতে গিয়ে সুকান্তকে ‘হাফপ্যান্ট মন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করলেন লাভলি। আর ‘কারচুপি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে বললেন, ‘ছাপার ভুল’। বললেন, ‘দায় আমার নয়’।
সুকান্ত রবিবার সকালে যে পোস্ট করেন, তাতে তিনি লেখেন, সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়কের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে ‘বিস্ময়কর অসঙ্গতি’ রয়েছে। সুকান্ত লেখেন, ‘‘সরকারি নথি অনুযায়ী তিনি ২০২০ সালে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেছেন। অথচ তাঁর সচিত্র প্রচার পুস্তিকায় লেখা, তিনি নাকি সেন্ট পল্স কলেজ থেকে ইতিহাসে বিএ।’’ সুকান্ত আরও লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য পরিচিতি পুস্তকে কলেজের নাম বদলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ‘গোয়েঙ্কা কলেজ’, যেখানে ইতিহাস পড়ানোই হয় না! আবার বিধানসভার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পূর্ণ রূপে ফাঁকা!’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী শুধু অভিযোগ তুলেই থামেননি। সমাজমাধ্যম পোস্টে তিনি নিজের অভিযোগের সমর্থনে নথিও তুলে ধরেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রসঙ্গকে এই ‘অসঙ্গতি’র সঙ্গে জুড়ে লেখেন, ‘‘খুব সহজেই অনুমেয়, এই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে শিক্ষার মানের অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে! আর শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রশ্নে তো তৃণমূলের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই!’’
বিধায়ক লাভলি এর জবাব দিতে গিয়ে প্রথমেই সুকান্তকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি শুনলাম কেন্দ্রের কোনও একজন হাফপ্যান্ট মন্ত্রী আমার সম্পর্কে কিছু ওঁর এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছেন।’’ তাঁর সম্পর্কে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে লাভলির ব্যাখ্যা, ‘‘আমি যখন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করি, তখন জমা দেওয়া নথিতে পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে যে, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি আমার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছি। সেটা বাদ দিয়ে বাকি কোথায় কী আছে, কোথায় কী নেই, কোথায় কী ছাপা হয়েছে, কে ছেপেছে, সেটা আমি জানি না। কোথাও যদি ছাপার ভুল হয়ে থাকে, কোথাও যদি ভুল তথ্য থাকে, তার দায়িত্ব কিন্তু আমার নয়।’’
কিন্তু সুকান্তের দেওয়া ‘প্রমাণ’ অনুযায়ী লাভলির নিজের দলের প্রচার পুস্তিকাতেই লেখা যে, লাভলি সেন্ট পল্স কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেছেন। সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘সেন্ট পল্স কলেজে আমি পড়তাম। এটাও মিথ্যা নয়। কিন্তু সেই কলেজ আমাকে ছেড়ে দিতে হয়। আমি ওখানে পড়াশোনা চালাতে পারিনি। কারণ খুব কম বয়স থেকে আমি পেশাদার অভিনয় শুরু করি। তখন অভিনয়ের কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকতাম যে, কলেজ আমাকে ছেড়ে দিতে হয়।’’
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য পরিচিতি পুস্তিকায় যে তথ্য রয়েছে, সে বিষয়ে কী বলবেন? সেখানে তো গোয়েন্কা কলেজ লেখা। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘গোয়েন্কা কলেজে আমি কোনও দিনই পড়িনি। হয়তো কোনও ভাবে কোনও ভুল তথ্য গিয়েছে। বা কোনও ছাপার ভুল হতে পারে। আমি বলতে পারব না।’’