• বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে সমবায় ভোটে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়, খাতা খুলতে পারল না তৃণমূল, অস্বস্তিতে দলের কোর কমিটি
    আনন্দবাজার | ১৩ জুলাই ২০২৫
  • বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে কৃষি সমবায়ের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সাফল্য পেল বিজেপি। সমবায়ের ন’টি আসনেই জয়ী হয়েছে তারা। গেরুয়া আবির মেখে বিজয় মিছিল বার করেন বিজেপি কর্মীরা। অন্য দিকে, বিধানসভা ভোটের আগে সমবায় ভোটে দলের এই পরাজয়ে অস্বস্তিতে বীরভূমের তৃণমূল কোর কমিটি। প্রসঙ্গত, বীরভূমে দল পরিচালনার কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের কোনও ব্যক্তিবিশেষ নন, কোর কমিটির সদস্যেরাই বীরভূমে দল পরিচালনার দায়িত্বে।

    রবিবার ময়ূরেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের ইটাহাট কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে ভোট হয়। বিকেলে ভোটের ফলপ্রকাশ হলে দেখা যায় সমবায়ের ন’টি আসনই নিজেদের দখলে রেখেছে বিজেপি। ভোটের ফল প্রসঙ্গে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “এই সমবায়ে বহু বছর ধরে কোনও নির্বাচন হয়নি। আমরা আগে থেকেই বলেছিলাম, যদি সঠিক এবং অবাধ নির্বাচন হয়, তা হলে বিজেপিই জিতবে। আজকের এই ফল সেই বক্তব্যের প্রমাণ।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, রাজ্য জুড়ে যদি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়, তা হলে রাজ্যের মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবেন।

    ভোটের ফল প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অস্বস্তি লুকোননি তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তিনি বলেন, “কোর কমিটির তরফ থেকে সমস্ত এলাকায় দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া রয়েছে। ওই এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তাঁকে প্রশ্ন করলে ভাল হয়। তবে এটা ঠিক, স্থানীয় নেতৃত্বের যদি কোনও খামতি না-থাকত, তা হলে এমনটা হত না।” যদিও তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এই নির্বাচনের ফলের কোনও প্রভাব আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পড়বে না।” কাজলের দাবি, বীরভূমের ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়লাভ করবে তৃণমূল। কোর কমিটির পরবর্তী বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

    তবে জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, আপাত ভাবে একটি কৃষি সমবায়ের নির্বাচন হলেও, ভোটের ফল বিধানসভা ভোটের আগে বীরভূমে উজ্জীবিত করছে বিজেপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের। অন্য দিকে, এই ফল তৃণমূলের কোর কমিটির জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে তালমিলের অভাব আগেও প্রকাশ্যে এসেছে। কোর কমিটির দুই সদস্য অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজলের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়।

    ২০২২ সালে গরুপাচার মামলায় কেষ্ট (অনুব্রতের ডাক নাম) গ্রেফতার হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বীরভূমে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। তাতে রাখা হয়েছিল কাজলকে। অনুব্রতহীন বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠনকে ধরে রেখেছিল এই কোর কমিটিই। তাদের তদারকিতেই লোকসভা নির্বাচনেও বীরভূমে ভাল ফল করে তৃণমূল। অন্য দিকে, গ্রেফতারির পরেও অবশ্য দলের জেলা সভাপতি পদে ছিলেন অনুব্রত। অভিযোগ, ফেরার পরে তিনি কোর কমিটিকে এড়িয়ে কাজ করছিলেন। যার ফলে দলের অন্দরে একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন কোর কমিটির বৈঠকও হয়নি বীরভূমে। এই নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ‘পদ’ কেড়ে নেওয়া হয় অনুব্রতের। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, বীরভূমে জেলা সভাপতির পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে। থাকছে শুধু কোর কমিটি, কাজলের মতোই অনুব্রত যার অন্যতম সদস্য মাত্র।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)