• হাঁসফাঁস দশা মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে, উত্তর দিনাজপুরে বাজ পড়ে তিনজনের মৃত্যু
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ ও সংবাদদাতা, কালিয়াগঞ্জ: কয়েকদিনের গুমোট গরম কাটিয়ে রবিবার দুপুরে ক্ষণিকের ঝড়বৃষ্টি। তাতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও বজ্রাঘাতে উত্তর দিনাজপুরে মৃত্যু হল তিনজনের। আহত আরও দুই। ইটাহার ও কালিয়াগঞ্জ ব্লকের তিনটি গ্রাম এই অঘটনের সাক্ষী থাকল। মৃত্যু হয়েছে ইটাহার গ্রাম পঞ্চায়েতের রামডাঙার বাসিন্দা জীতেন বর্মনের (৫০)। একই ঘটনাস্থলে আহত হন বছর চল্লিশের অতুল বর্মন ও নির্মল বর্মন। অপরদিকে, বজ্রপাতে কালিয়াগঞ্জের বোচাডাঙ্গা এলাকার দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন ভুপাল দেবশর্মা (৬০) ও রুমা সরকার (২৮)। 

    জানা গিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই খোলা মাঠে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় মর্মান্তিক অঘটনটি ঘটে যায়। পুলিসের বক্তব্য, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে তিনজনের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু প্রসঙ্গে রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি বলেন, বর্ষার মরশুমে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। কিন্তু তারপরও অঘটন ঘটে যায়। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে কিছু প্রক্রিয়ার পর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মৃতদের পরিবারকে। সেটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর সংশ্লিষ্ট ব্লক থেকেই পদক্ষেপ করা হয়। 

    ইটাহারের রামডাঙার বাসিন্দা মৃত জীতেনের আত্মীয় ভরত বর্মন বলেন, এদিন সকাল থেকে কাকা জীতেন বাড়ি থেকে এক কিমি দূরে খেতে পাট কাটতে যায়। সঙ্গে ছিল অতুল ও নির্মল। এদিন দুপুরে হঠাত্ ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু হয়। তখনই হঠাত্ বাজ পড়ে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় জীতেনবাবুর। বাকি দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। 

    অপরদিকে, কালিয়াগঞ্জের বোচাডাঙায় বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিতাই বৈশ্য বলেন, বোচাডাঙা এলাকার দু’টি গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ভুপাল দেবশর্মা নামে একজন মাঠে কাজ করছিলেন। এমন সময় বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পাশের গ্রামের বাসিন্দা রুমা সরকার গবাদি পশু আনতে মাঠে গিয়েছিলেন। তাঁরও মর্মান্তিকভাবে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়। দু’জনকে উদ্ধার করে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

    অন্যদিকে, লাগাতার কয়েকদিনের গুমোট গরমের পর রবিবার দুপুরে রায়গঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় ঝড়, বৃষ্টি হয়। তাতে গরম কিছুটা কমে। আবহাওয়া কিছুটা আরামদায়ক হয়। সিকিমে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, আগামী দু-তিনদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হবে। তবে, লাগাতার কয়েকদিন দাবদাহের প্রভাবে অস্থির অবস্থা মালদহ ও বালুরঘাটে। তীব্র গরমে পুড়ছে গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। প্রখর রোদে রবিবার ছুটির দিনে বালুরঘাট কার্যত শুনশান ছিল। গরমের জন্য রাস্তাঘাটে তেমন লোকজন বের হননি। বিকেলের দিকে মেঘ ঘনিয়ে এলেও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। মালদহে রবিবার বিকেলে সামান্য বৃষ্টি মৃদু স্বস্তি দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আগামী পাঁচদিন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা বেশি থাকার সম্ভাবনা। 

    বালুরঘাট মাঝিয়ান আবহাওয়া পর্যবেক্ষক কেন্দ্র সূত্রে খবর, আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    সর্বনিম্ন ছিল ২৭.৪ ডিগ্রী। আবহবিদ সুমন সূত্রধর বলেন, আগামী ১৪ তারিখ পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা ও মাঝারে বৃষ্টি হতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। 

    আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বিক্ষিপ্ত হালকা মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি। রায়গঞ্জে তোলা নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)