• ছিল ২০০, এখন রয়েছে মাত্র ১৭ জন পড়ুয়া, ধুঁকছে তপনের শরিফাবাদ জুনিয়র হাইস্কুল
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • মেহেবুব হোসেন সরকার  তপন

    শিক্ষক সঙ্কটে ধুঁকছে শরিফাবাদ জুনিয়র হাইস্কুল। ২০০৮ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর একসময় পড়ুয়া সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল দু’শোয়। বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্রসংখ্যা মাত্র ১৭। তপন ব্লকের দ্বীপখণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের যসরাই শরিফাবাদ জুনিয়র হাইস্কুল যেন আজ শুধুই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে মাত্র একজন ছাত্র। শিক্ষার আলো ছড়ানোর যে প্রত্যয় নিয়ে এই বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল, বর্তমানে তা হারিয়ে যেতে বসেছে শিক্ষক সঙ্কট ও অন্য কারণে।

    বিদ্যালয়ে বর্তমানে আছেন মাত্র দু’জন শিক্ষক। টিআইসি সৌমেন সরকার (ইংরেজি বিভাগ) এবং বাংলা বিভাগের এক শিক্ষক। তাঁদের সামলাতে হচ্ছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির সমস্ত ক্লাস। অঙ্ক, বিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের কোনও শিক্ষক নেই বিদ্যালয়ে। টিআইসি সৌমেন সরকার বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে, তখন থেকেই ছাত্র সংখ্যা কমতে শুরু করে। পাশেই শরিফাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে অনেক ছাত্র চতুর্থ শ্রেণির পর সেখানেই থেকে যায়। বিদ্যালয়ে একজন গ্রুপ ‘ডি’ কর্মী ও একজন আইসিটি (কম্পিউটার শিক্ষক) কর্মীকেও নিয়মিত ক্লাস নিতে হয় শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে। সৌমেনবাবুর দাবি, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় যাতে ঘাটতি না হয়, সেই লক্ষ্যে সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাস্তব বলছে, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে অভিভাবকদের মধ্যে বিদ্যালয় নিয়ে অনীহা বাড়ছে।

    স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, আমার দুই ছেলেমেয়ে। দু’জনকেই দাঁড়ালহাট হাইস্কুলে ভর্তি করেছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতেই হয়। অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়ানোর কোনও শিক্ষকই নেই শরিফাবাদ জুনিয়র হাইস্কুলে। তাহলে কীভাবে আমরা ভরসা করব এই স্কুলের উপর? পড়াশোনার মান নিয়ে উদ্বেগ থেকেই ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি।

    একই কথা বিশিষ্ট শিক্ষক অলোক সরকারেরও। তাঁর মতে, জুনিয়র হাইস্কুলগুলির পরিকাঠামো যথেষ্ট ভালো। অনেক জায়গায় প্রাইমারি ও জুনিয়র হাইস্কুল পাশাপাশি রয়েছে। প্রশাসন যদি এই দুই ধরনের বিদ্যালয়কে একত্রিত (মার্জ) করে অথবা জুনিয়র হাইস্কুলগুলিকে মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করে, তাহলে ছাত্রসংখ্যা বাড়ানো ও শিক্ষার মান বজায় রাখা সম্ভব।

    শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় শুধু শরিফাবাদ নয়, বহু বিদ্যালয়েই ছাত্র সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। এই সঙ্কট কাটাতে এখনই কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে, এই ধরনের বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

    শিক্ষা ব্যবস্থা কি তবে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামীণ বাংলায়? শরিফাবাদ জুনিয়র হাইস্কুল অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)