নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: রোদের তেজে সকাল ১০টাতেই রাস্তায় বেরনো যাচ্ছে না। দুপুর হতে না হতেই শুনশান হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। জলের অভাবে মাঠে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল। সেচদপ্তরের হিসেব বলছে, জলপাইগুড়িতে রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি ৪৯ শতাংশ। গতবছর এদিন পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছিল ২০৯৯ মিমি। গতবারের তুলনায় তিনভাগের একভাগও বৃষ্টি হয়নি এখনও। শুধু জলপাইগুড়ি নয়, গোটা উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত গড়ে ৫০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। দার্জিলিং জেলায় ৪৭ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৫৬ শতাংশ, কোচবিহারে ৫০ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৬০ শতাংশ, মালদহে ৩১ শতাংশ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪২ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। এদিন শিলিগুড়িতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি, কোচবিহারে ৩৭.২, আলিপুরদুয়ারে ৩৭, মালদহে ৩৭ ও দার্জিলিংয়ে ২৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও রাতে জলপাইগুড়িতে স্বস্তির বৃষ্টি নামে।
তীব্র গরমে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। মিলছে না সেচের জল। মারাত্মক প্রভাব পড়েছে চা বাগানে। কমে গিয়েছে পাতার উৎপাদন। বৃষ্টির আশায় বিভিন্ন জায়গায় মিথ-এ ভর করে ব্যাঙের বিয়ে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। দুঃসহ গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত জেলাবাসীর। এদিকে, সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন, আজ সোমবার থেকে আবার বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি শুরু হবে। এতে গরমের দাপট ধীরে ধীরে কমবে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রবিবার জলপাইগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। গোটা জুলাই মাসে খুব বেশি বৃষ্টি হয়নি জেলায়। সেক্ষেত্রে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা করছে সেচদপ্তর। জলপাইগুড়ি জেলায় প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে ৩০০০-৩২০০ মিমি বৃষ্টি হয়। সেখানে এখনও এক হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়নি। ফলে পরবর্তীতে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক।
এদিকে, গরমে জেরবার পাহাড়ও। রবিবার দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে টি-শার্ট পরেই ঘুরেছেন পর্যটকরা। কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ে বাড়ি, হোটেলে চালাতে হয়েছে ফ্যান। দুপুরের পর দার্জিলিং জেলার সমতলভাগ শিলিগুড়ি শহরের রাস্তাঘাট ছিল কার্যত শুনশান। দাবদাহের কারণে ধান খেত ও চা বাগানে জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। পাট পচাতেও হতে পারে সমস্যা। এর মোকাবিলায় সৌরশক্তি চালিত ১০০টি ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে শিলিগুড়িতে।
এদিকে, শনিবার রাতে ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয় ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্করিয়া হাটে। বিয়ে শেষে আয়োজন করা হয়েছিল ভোজের। দিনহাটা-২ ব্লকের মহাকালহাট সংলগ্ন পাথরশনে রবিবার রাতে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের পুকুরপাড়ে বাঁশ, ফুল ও পাতা দিয়ে সাজানো হয়েছিল বিয়ের মণ্ডপ। ব্যাঙ দম্পতির সাজসজ্জা থেকে শুরু করে সিঁদুর দান, ভূরিভোজ, পটকা ফাটানো-সব বন্দোবস্তই ছিল।