হিমঘরে আলুর দর ৬-৭ টাকা, ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা
বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ভালো দাম পাওয়ার আশায় বহু চাষি হিমঘরে আলু মজুত রেখেছেন। এই সময় আলু বিক্রির টাকায় অনেকেই ধান চাষ করেন। সার, শ্রমিকদের মজুরি সহ বিভিন্ন খরচ আলু বিক্রির টাকা থেকে উঠে আসে। চাষিরা এখন হিমঘরে মজুত রাখা আলুর দাম কেজি প্রতি ছয়-সাত টাকা পাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, এর থেকে মাঠে আলু বিক্রি করে দিলে লাভ হতো। হিমঘরে আলু মজুত রেখে বড় ব্যবসায়ীরা লাভ করবে। তাঁরা পুজোর পরও হিমঘরে আলু রাখবে। চাষিরা এই সময় অধিকাংশ আলু বিক্রি করে দেন। নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁরা ব্যবসায়ীদের মতো আলু মজুত রাখতে পারেন না। চাষের খরচের জন্য তা আগেই বিক্রি করতে হয়।
বোহারের আলু চাষি শেখ মহম্মদ ইউসুফ বলেন, ফড়েরা আলু বিক্রি করে লাভ করছে। খোলা বাজারে আলু কেজি প্রতি ১৭ থেকে ১৯ টাকা দরে বিক্রি করছে। কোথাও কোথাও আবার দাম আরও বেশি। চাষিরা কেজি প্রতি আলুর দাম ১০ টাকাও পাচ্ছে না। দাম না বাড়লে চাষিদের বড় ধাক্কা খেতে হবে। হিমঘরে আলু রেখেও যদি দাম না পাওয়া যায়, তাহলে চাষিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
মেমারি-২ ব্লকের কানপুর গ্রামের চাষি দেবপ্রসাদ কর্মকার বলেন, খোলা বাজারে সেভাবে আলুর দাম কমছে না। অথচ চাষিরা দাম পাচ্ছে না। এই দাম থাকলে খরচও উঠে আসবে না। ফড়ে এবং বড় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এখন দাম নেই, অথচ পুজোর পর ছবিটা বদলে যাবে। তখন হিমঘরে চাষিদের আলু থাকে না। বড় ব্যবসায়ীরাই ফায়দা তোলে।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মরশুমে পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিটি ব্লকেই যথেষ্ট পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছিল। বৃষ্টির জন্য কয়েকটি পঞ্চায়েতে আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই এলাকার চাষিরা বিমার টাকা পেয়েছেন। দাম পাওয়ার আশায় অনেক ক্ষুদ্র চাষি হিমঘরে আলু মজুত রাখেন। তাঁদের দাবি, এই সময় ধানের দামও তেমন নেই। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে খাদ্যদপ্তর ক্যাম্প করছে না। সেই কারণে হিমঘরে রাখা আলু চাষিরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, আলুর দামের ফারাক এতটা হওয়া উচিত নয়। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে আলু কিনছেন। চাষিদের কাছে আরও বেশি লাভ্যাংশ যাওয়া দরকার। প্রয়োজনে বাজারগুলিতে অভিযান চালানো হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, হিমঘরে রাখা আলু বাছাই করতে হয়। ছোট আলুর দাম পাওয়া যায় না। বাছাই করার পর আলু রাজারে পাঠাতে হয়। বাছাই আলুর দাম বেশি। চাষিরা বাছাই করা আলু বাজারে পাঠালে দাম বেশি পেত।-ফাইল চিত্র