নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: তিনি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। এতদিন পড়ুয়াদের নীতিপাঠ দিয়েছেন। এবার উচিত শিক্ষা দিলেন বেয়াদবদের। তাঁকে ও তাঁর বোনকে কটুক্তি করে, খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে ইভটিজিং করছিল কিছু যুবক। সেই ইভটিজারদের গাড়ি ওভারটেক করে আটকে তাদের গাড়ির চাবি খুলে নিয়ে পুলিস ফাঁড়িতে হাজির বরাকরের বালতোড়িয়া এলাকার শিক্ষিকা। শনিবার রাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কুলটি থানার বরাকর স্টেশন রোড এলাকায়। তরুণী শিক্ষিকার সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে সকলেই। পুলিসও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ছয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছি।
জানা গিয়েছে, এদিন রাতে বরাকর বাজারে পরিবারের সঙ্গে এসেছিলেন শিক্ষিকা। পরিবারের বাকি সদস্যরা টোটোয় করে বেগুনিয়া মোড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে স্কুটিতে নিজের দিদির শিশুকে কোলে নিয়ে যাচ্ছিলেন অবিবাহিত শিক্ষিকা। স্কুটি চালাচ্ছিলেন কলেজ পড়ুয়া তাঁর বোন। বরাকর স্টেশন রোডের কাছে তাঁদের স্কুটির পিছনে একটি গাড়ি ক্রমাগত হর্ন দিতে থাকে। অভিযোগ, তাঁরা সাইড দিয়ে দিলেও হর্ন বাজাতে থাকে। এমনকী স্কুটিটিকে যখন গাড়িটি ওয়ারটেক করছে তখন তাঁদের উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে উত্যক্ত করা হয়। এই ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ চলার পর শিক্ষিকা সিদ্ধান্ত নেন প্রতিবাদ করবেন। এরপরই বোনকে নির্দেশ দেন স্কুটির গতি বাড়িয়ে যেন গাড়িটিকে ওভারটেক করে। সেই মতো দুই বোন যখন ইভটিজারদের গাড়িটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে তখন তাঁদের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাতেও ভয় না পেয়ে ইভটিজারদের গাড়ি ওভারটেক করে বরাকর স্টেশন রোডে স্কুটি দাঁড় করিয়ে দেয় দুই বোন। শিশু সন্তান কোলে নিয়েই গাড়ির চাবি খুলে নেন। তাঁর বোনকে নিয়ে সোজা হাজির হন বরাকর পুলিস ফাঁড়িতে। সেখানে চাবি পুলিস অফিসারদের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরই পুলিস তৎপর হয়ে ছয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা ঘাঘরবুড়ি থেকে আত্মীয়র বিয়ে দিয়ে ফিরছিলেন। চারজন বরাকরের ও দু’জন বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা। জানা যায়, তরুণী শিক্ষিকাকে বিভিন্ন চাপ দেওয়া হয় থানায় অভিযোগ না করার জন্য। যদিও চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি তিনি। তরুণী অভিযোগ করতেই পুলিসও গাড়িটিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার বলেন, রাজ্যের যা অবস্থা তাতে মেয়েদের আত্মরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। আমি ওঁর সাহসিকতাকে সম্মান জানাচ্ছি। ওঁকে দেখে বাকিরাও সাহস পাবেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের কুলটির ব্লক সভাপতি কাঞ্চন রায় বলেন, শিক্ষিকা শুধু তো পড়ুয়া নয়, সমাজকেও শিক্ষা দেয়। এদিন তিনি ইভটিজারদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়েছেন। সবাই এভাবে রুখে দাঁড়ালে অন্যায়কারীরা পিছু হটবে। ইভটিজারদের গাড়ি।-নিজস্ব চিত্র