তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির মাথায় গুলি করে নৃশংস খুন, সাঁইথিয়ায় আটক ২ মহিলা সহ তিনজন
বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও সংবাদদাতা, বোলপুর: শনিবার গভীর রাতে সাঁইথিয়া ব্লকের কোনারপুরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে এক তৃণমূল নেতাকে খুন করা হল। বাড়ি থেকে মাত্র ৫০০মিটার দূরে তিনমাথার মোড় থেকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম পীযূষ ঘোষ। তিনি শ্রীনিধিপুর অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। ঘটনার পর রাতেই মৃতদেহ বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। শাসক নেতৃত্ব রাজনৈতিক যোগের তত্ত্বে সিলমোহর না দিলেও মৃতের স্ত্রী তিস্তা ঘোষ বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন। যদিও বিজেপির দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন। দুই মহিলা সহ তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সাঁইথিয়া থানার পুলিস। পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দ্রুত মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হবে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পীযূষবাবুর মোবাইলে একটি কল আসে। এরপরই বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ বাদেই স্ত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন। যদিও তেমন কোনও কথা হয়নি। এরপরই মাঝরাতে রাস্তায় তাঁকে খুন করা হয়। রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মৃতদেহের পাশেই তাঁর বাইকটি দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। পুলিস সূত্রে খবর, মাথার পিছন থেকে গুলি করা হয়েছে। পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে গুলি করায় তা মাথা ফুঁড়ে সামনের দিক থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এলাকায় পুলিস মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। কার্যত থমথমে গোটা এলাকা।
রবিবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছন লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ। এরপর তিনি ঘটনাস্থল দেখে পীযূষবাবুর বাড়িতে যান। জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখও সেখানে পৌঁছন। তাঁরা মৃতের স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। মৃতের পরিবারের তরফে চাকরির দাবি জানানো হয়েছে। এবিষয়ে তাঁরা সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন।
মৃতের স্ত্রী বলেন, এক বছর আগে বাড়ির দরজায় চিরকুট সাঁটিয়ে দিয়েছিল। তাতে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। মাঝেমধ্যে ফোনেও হুমকি দেওয়া হতো। রাতে ফোন পেয়ে স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আমি বারণ করেছিলাম। আমার আশঙ্কা এই ঘটনায় বিজেপির যোগ রয়েছে। দোষীর শাস্তি চাই। লাভপুরের বিধায়ক বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের আশঙ্কা এই ঘটনায় সমাজবিরোধী যোগ রয়েছে। পুলিসি তদন্তের উপর আমাদের আস্থা আছে। কাজল বলেন, উনি দক্ষ সংগঠক ছিলেন। আমাদের আশঙ্কা সুপারিকিলার এনে তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় যে বা যারা জড়িত তারা কঠোর শাস্তি পাবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ থাকলে তারা সাজা পাবে। পুলিস তদন্ত করছে। অতি দ্রুত আসল সত্য উদ্ঘাটিত হবে। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি এধরনের ঘৃণ্য চক্রান্তের সঙ্গে সবসময় যুক্ত থাকে। যদিও বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দীপক দাস বলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই তৃণমূল নেতা খুন হয়েছেন। কোন নম্বর থেকে ওই নেতার ফোন এসেছিল খতিয়ে দেখছে পুলিস। -নিজস্ব চিত্র