• প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই শ্বশুরকে হত্যা, বাপেরবাড়িতে থেকে ‘অপারেশন’ , ধৃত বউমা
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ছেলের বউ আর প্রতিবেশী যুবকের পরকীয়া দেখে ফেলাই কাল হয়েছিল মল্লারপুরের রাতমা গ্রামের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা তমাল বাগদির (৫৫)। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত পুত্রবধূ সীমা প্রেমিক মনোরঞ্জনকে দিয়ে হত্যা করায় শ্বশুরকে। সীমাকে থানায় ডেকে দীর্ঘ জেরা করে খুনের নেপথ্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারে পুলিস। তারপরেই তারা গ্রেপ্তার করে সীমা মালকে। রবিবার ধৃতকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক অভিযুক্তের চারদিনের জেল হেফাজত মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী মণিরুল ইসলাম বলেন, ধৃত ৬ মাস ও ৪ বছর বয়সি দুই সন্তানের মা। দুই শিশুকেও মায়ের সঙ্গে জেলেই রাখা হয়েছে। আগামী বুধবার সীমা এবং আগেই গ্রেপ্তার হওয়া সীমার প্রেমিক মনোরঞ্জন দুজনকে একসঙ্গে ফের আদালতে তোলা হবে। 

    তমাল বাগদি গত রবিবার দুপুরে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে গ্রামের একটি মাঠে কাজে যান। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তিনি বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরের দিন গ্রামের পুকুর পাড়ে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় তমাল বাগদির মৃতদেহ। মৃতের স্ত্রী সুশ্রী বাগদির বয়ান মতো পুলিস শুরুতে গ্রামেরই তিনজনকে আটক করে। তাদের মধ্যে একজন মনোরঞ্জন। তখনই সুশ্রী দাবি করেছিলেন, বউমা প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। দিন পনেরো আগে সেটা আমরা দেখি ফেলি। বউমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওরাই আমার স্বামীকে মেরেছে। দীর্ঘ জেরার পর রাতের দিকে রায়বেশে শিল্পী মনোরঞ্জন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বাকি দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে, ঘটনার মাস ছয়েক আগে তমালের ছেলে দুলাল বাগদি স্ত্রী সীমা ও দুই সন্তানকে ফেলে প্রতিবেশী এক বধূকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর সীমার সঙ্গে দুই সন্তানের পিতা মনোরঞ্জনের অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়। দিন কয়েক আগে মনোরঞ্জনের সঙ্গে বউমার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত চোখে পড়ে যায় তমাল ও সুশ্রীর। এই নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। বউমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন তমাল। এরপর থেকেই পথের কাঁটা শ্বশুরকে সরানোর জন্য মনোরঞ্জনকে চাপ দিতে থাকে সীমা। প্রেমিকার চাপে তমালের গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করে মনোরঞ্জন। ওইদিন তমাল মাঠের উদ্দেশ্যে বের হতেই তাঁর পিছু নেয় মনোরঞ্জন। একটি ঝোপের আড়াল থেকে প্রৌঢ়কে নজরে রেখেছিল সে। সীমাকে ফোন করে তা জানিয়েও ছিল মনোরঞ্জন। তখনই সীমা বলে, শ্বশুরকে মেরে ফেলার এটাই মোক্ষম সময়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তমাল বাড়ি ফিরছিল। সেই সময়ে সীমাকে ফোনে রেখেই পিছন থেকে তমালের মাথায় কুড়োলের বাঁট দিয়ে মারে মনোরঞ্জন। প্রৌঢ় জ্ঞান হারিয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। তখন তাঁর মাথার সামনের দিকেও মারে মনোরঞ্জন। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাশের পুকুরপাড়ে গর্ত করে প্রৌঢ়কে পুঁতে দিয়ে সীমাকে ফোনে জানায়— ‘কাজ ফিনিশ’। এরপর পুকুরে কুড়োলের বাট ফেলে হাত-পা ধুয়ে বাড়ি ফিরে আসে মনোরঞ্জন। পুলিসের দাবি, ধৃত যুবকের মোবাইল কল লিস্ট ঘেঁটে এইসব তথ্য মিলেছে। শনিবার সন্ধ্যায় মনোরঞ্জনকে দিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। 

    পুলিস জানিয়েছে, শনিবার মৃতের বউমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়। জেরায় সে সব স্বীকার করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিসের দাবি, সীমা ও মনোরঞ্জনের পরবর্তী টার্গেট ছিল তাদের পথের আরেক কাঁটা শাশুড়ি সুশ্রী। জেরায় তাও কবুল করেছে ধৃতরা। সুশ্রী দুজনের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)