নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য কাগজে বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল। সেই নিয়োগ পরীক্ষায় বেছে বেছে উত্তীর্ণ হন কেবল ওই কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব সংগঠনের দাদারা। বর্তমানে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়া অর্ধেন্দু মাইতি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকাকালীন ইউনিয়নের নেতা এবং পার্টির একগুচ্ছ নেতার পুনর্বাসন হয়েছিল বাজকুলে কলেজে। সেই তালিকায় কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন জিএস সঞ্জীব বাড়ইয়ের মতো নেতার পাশাপাশি ইউনিয়ন দাপানো জয়দেব পাত্র, চন্দন কর, অচিন্ত্য শাসমল, দেবপ্রসাদ ভুঁইয়ার স্ত্রী তনুশ্রী কর ভুঁইয়া প্রমুখ আছেন। তৎকালীন যুব সংগঠনের একাধিক নেতাও কলেজে চাকরি পান। ভগবানপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ সুজিত বেরা, গড়বাড়ি-১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য মানস জানা সহ আরও অনেকে আছেন। ওই স্থায়ী কর্মীদের পাশাপাশি কলেজ ২০-২২জন অস্থায়ী কর্মী আছেন। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও যুব নেতাদের ক্যাজুয়াল পোস্টে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।
২০১৭সাল থেকে কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ। কিন্তু, কলেজে ইউনিয়ন রুমে দাদাগিরি থেমে নেই। ২০২১সালে জানুয়ারি মাসে বাজকুল কলেজের গেটে বিরোধী ছাত্র সংগঠন পতাকা বাঁধার সময় তীব্র ঝামেলা হয়। সেইসময় বোমাবাজিও হয়। গত দশ বছরের বেশি সময় এই কলেজে ‘মনোজিৎ মডেল’ চলছে বলে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ। বহিরাগতদেরও যাতায়াত রয়েছে। ইউনিয়নের নেতা হলেই চাকরির সুযোগ। এই লোভে পাঁচ বছর আগে কলেজ ছেড়ে যাওয়া দাদারাও ইউনিয়ন রুমে অবাধ যাতায়াত করেন।
কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পঠনপাঠন চলাকালীন ভর্তি হয়েছিলেন রবীনচন্দ্র মণ্ডল। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় দাদাদের টপকে তিনি ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা হন। বর্তমানে তিনি ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি। বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়ে গভর্নিং বডির ডোনার মেম্বারও। কলেজ পরিচালনায় ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রায়ই হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কলেজে আলপিন থেকে আলমারি যে কোনও সামগ্রী সরবরাহ করার বরাত পান। ছাত্র, যুব থেকে পার্টির নেতাদের হস্তক্ষেপ প্রতি মুহূর্তে টের পায় এখানকার কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
কলেজের গভর্নিং বডির ডোনার মেম্বার তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি রবীনবাবু বলেন, যাঁরা কলেজ কর্মী হিসেবে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বেছে বেছে পার্টির লোকজনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ছাত্র ইউনিয়ন করা অনেক ছাত্রছাত্রী মেধাবী। তাঁরা কী চাকরি পেতে পারেন না? আমি কলেজের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। অনেকেই নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন।
কলেজের কর্মী তথা ভগবানপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুজিত বেরা বলেন, ২০১৫সালে আমাদের নিয়োগ হয়েছিল। সেসময় ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন চাকরি পান। ওই সময় গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি। একটি এজেন্সিকে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা যোগ্য প্রার্থী বাছাই করেছিল। এক্ষেত্রে স্বজনপোষণের অভিযোগ ঠিক নয়।
বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা বিজেপির খেজুরি-৫ মণ্ডল সভাপতি সৌমিত্র সাউ বলেন, ২০১৭সাল থেকে কলেজে ছাত্র সংসদ ভোট হয়নি। অথচ, আট বছর ধরে অন্যায়ভাবে ছাত্র সংসদ রুম দখল করে রেখেছে টিএমসিপি। বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে কোনওরকম কার্যকলাপ করতে দেওয়া হয় না। এরা ইউনিয়ন করেই চাকরি পাচ্ছে আর, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা পাশ করার পর চাকরির জন্য রাস্তায় ধর্নায় বসছেন।-নিজস্ব চিত্র