সংবাদদাতা, বহরমপুর: দুই সন্তানের সামনেই কেরোসিন ঢেলে বধূর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জ্বলন্ত অবস্থায় কোনওরকমে ছুটে পালিয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ঝাঁপ দিলেও বাঁচতে পারেননি তিনি। সাগরদিঘি থানার শিয়ারা গ্রামে এমন অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতার নাম তাহিরা বিবি(৩৩)। খুনে অভিযুক্ত মৃতার স্বামী গ্রেপ্তার হলেও শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক। অভিযোগ, এর আগেও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাহিরাকে জলে ডুবিয়ে খুনের চেষ্টা করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এঘটনায় ওই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
শনিবার সকালে ওই ঘটনার পর তাহিরা বিবিকে হাসপাতালে পালিয়ে রেখেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে গিয়েছিল। রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বধূর মৃত্যু হয়। এরপর মৃতার পরিবারের তরফে সাগরদিঘি থানায় তাঁর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিস মূল অভিযুক্ত তথা মৃতার স্বামী রাফিবুল শেখকে গ্রেপ্তার করলেও শ্বশুর সুকুরুদ্দি শেখ ও শাশুড়ি রুমেলা বিবি পলাতক। ধৃতকে রবিবার জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
১৩বছর আগে সাগরদিঘি থানার বয়ার গ্রামের বাসিন্দা তাহিরা বিবির সঙ্গে শিয়ারা গ্রামের রাফিবুল শেখের বিয়ে হয়। তাহিরার বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, দুই সন্তানের জন্মের পর থেকেই পেশায় রাজমিস্ত্রি রাফিবুল স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন চালাত। মৃতার মা জেবারুন বিবি বলেন, মেয়ের গর্ভে তৃতীয় সন্তান থাকাকালীন ওকে জলে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। পড়শিদের হস্তক্ষেপে সেবার কোনওমতে মেয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে। এরপর সালিশি সভায় মীমাংসা করে ফের মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর উপর অত্যাচারের মাত্রা কমেনি।
শনিবার তাহিরার নয় বছর বয়সী বড় মেয়ে স্কুলে গিয়েছিল। অভিযোগ, বেলা ১১টা নাগাদ অপর দুই সন্তানের সামনেই তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাহেরা বিবি জ্বলন্ত অবস্থায় কোনওমতে পালিয়ে এসে বাড়ির পাশের পুকুরে ঝাঁপ দেন। পড়শিরা জড়ো হওয়ায় তাহিরার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই তাঁকে উদ্ধার করে সাগরদিঘি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। খবর পেয়ে তাহিরার বাপের বাড়ির লোকজন তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু রবিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃতার কাকিমা রিনা বিবি বলেন, স্বামীর সংসারে কোনওদিন মেয়েটা সুখ পায়নি। সন্তানদের মুখ চেয়ে অত্যাচার সহ্য করেই বেঁচে ছিল। ওরা অনেকদিন থেকেই তাহিরাকে খুনের পরিকল্পনা করছিল। সেটাই হল। ওদের কঠোর শাস্তি চাই। তাহিরার পড়শি আলিবুর শেখ বলেন, গ্রামের সবাই এঘটনার প্রচণ্ড নিন্দা করছেন। পুরো গ্রামের মানুষ ওই পরিবারের শাস্তি চাইছে।