বেহাল রাস্তায় ঢোকে না অ্যাম্বুলেন্স, রোগীকে নিতে ভরসা কাঠের তক্তা
বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: রাতের অন্ধকারে কাঠের দোলায় অসুস্থকে শুইয়ে হাসপাতালের পথে বাসিন্দারা। এমনই ভয়ানক ছবি উঠে এসেছে খড়গ্রাম ব্লকের সুজাপুর গ্রামে। কারণ পাঁচ দশকেও গ্রামে তৈরি হয়নি রাস্তা। তাই বৃষ্টি মাথায় করেই অন্ধকারের জলকাদার মাটির রাস্তা ধরেই যেতে হচ্ছে তাঁদের। তফসিলি অধ্যুষিত ওই গ্রামের ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫০০। অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষক ও মৎসজীবী। গ্রামে পৌঁছতে গেলে বহরমপুর সুলতানপুর-১১ নম্বর রাজ্য সড়কের কান্দি ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্টপেজে নামতে হবে। এরপর গ্রামের মানুষের তৈরি কানা ময়ূরাক্ষী নদীর ব্রিজ পেরতে হবে। পরে প্রথম কানা ময়ূরাক্ষী নদীর দুই কিলোমিটার, পরে আরও দুই কিলোমিটার জমির পাশ দিয়ে তৈরি মাটির রাস্তা ধরে এগতে হবে। অবশ্য গ্রামে বিদ্যুৎ আছে। রয়েছে পাকাবাড়ি ও একটি অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র।
বাসিন্দারা বলেন, তাঁদের অভাব বলতে একটিই সেটা হল গ্রামে ঢোকার রাস্তা। দীর্ঘ পাঁচদশক ধরে এই রাস্তার জন্য তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছেন। এদিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়। মাটির রাস্তা একেবারে চলাচলের অযোগ্য। এঁটেল মাটির রাস্তায় বাইক, টোটো, চারচাকা চলাচল করতে পারে না। কিন্তু, বাসিন্দারা ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হন। কারণ দীর্ঘদিন যাতায়াত করতে করতে তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সেই অভ্যেসের বশেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে বৃষ্টি মাথায় অসুস্থকে কাঠের দোলায় শুইয়ে চার বেহারা হাসপাতাল ছুটছেন। পাশে দুই যুবক মোবাইলের আলো জ্বেলে পথ দেখাচ্ছেন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে তাঁদের দাবি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বালিয়া পঞ্চায়েত সদস্য মন্দাকিনি হাজরা বলেন, আমাদের কষ্ট বলতে এই একটাই। কেউ অসুস্থ হলে কাঠের দোলায় শুইয়ে বা ডুলিতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। রাস্তাটি হলে দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটে যেত। গ্রামবাসীদের আশা পূরণ হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণিমা হাজরা বলেন, গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। তাই ঘরে ঘরে কাঠের দোলা বা ডুলি ও দড়ি মজুত রাখতে হয়। বাসিন্দা কৃষ্ণ হাজরা বলেন, শুধু এগুলি ছাড়াও রোগীকে বয়ে নিয়ে চার কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চারজন শক্তপোক্ত লোকেরও দরকার। গ্রামবাসী শ্রীমন্ত হাজরা, কৃষ্ণ হাজরা বলেন, শুধু বর্ষা নয়, বছরভর তাঁদের এভাবেই অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তবে বর্ষায় কষ্ট বেড়ে যায় কয়েকগুন।
এবিষয়ে স্থানীয় বালিয়া পঞ্চায়েত প্রধান বেলি ঘোষ বলেন, ওই গ্রামে ঢোকার রাস্তার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কারণ একটি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়। খড়গ্রামের বিডিও মিলনি দাস বলেন, সমস্যা হচ্ছে সেচদপ্তরের বাঁধের উপর দিয়ে রাস্তাটি গিয়েছে। তবে অসুস্থকে কাঠের দোলায় নিয়ে যাওয়া খুব দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। এসআরডিএ প্রকল্পে ওই রাস্তা তৈরি হবে। খড়গ্রামের বিধায়ক আশিস মার্জিত বলেন, দ্রুত ওই রাস্তা তৈরি হবে। শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে।