নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বেসরকারি নার্সিংহোমের সঙ্গে গোপন আঁতাত সিভিক ভলান্টিয়ারের! বাড়ির লোককে রোগী সাজিয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে নার্সিংহোমে। তারপর তাকে ভর্তি দেখিয়ে উঠছে লক্ষাধিক টাকার বিল। যদিও সেই রোগীর কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে খাতায়-কলমে নার্সিংহোমে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারের সেই ভুতুড়ে রোগীই মেডিক্লেমের টাকা হাতানোর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এইভাবেই ফলস মেডিক্লেমের মাধ্যমে সরকারি টাকা তোলার ঘটনা সামনে এসেছে কালীগঞ্জ থানা এলাকায়। সেখানকার একটি নার্সিংহোমে পাঁচজন সিভিক ভলান্টিয়ারের এই মেডিক্লেম কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে এসেছে। পলাশী সংলগ্ন এলাকায় একটি নামজাদা নার্সিংহোমেই এই কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যা নিয়ে পুলিস মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। পুলিসের পক্ষ থেকেও রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা জমাও পড়বে। মেডিক্লেমের টাকা হাতানোর এই অসাধু উপায়ের জন্য ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বড়সড় সমস্যায় পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা তদন্ত করে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।
জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত পলাশী এলাকার বড়চাঁদ ঘর পঞ্চায়েতের খড়ের মাঠ এলাকায় রয়েছে একটি নামাজাদা নার্সিংহোম। গ্রেডের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে ওই নার্সিংহোমটি। ওই নার্সিংহোম থেকেই কালীগঞ্জ থানার পাঁচ জন সিভিক ভলান্টিয়ারের নামে ফলস মেডিক্লেম জমা পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের আত্মীয় সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে ১০-১২ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসার বিলও উঠেছে কয়েক লক্ষ টাকা। কিন্তু, আদতে নাকি সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোনও আত্মীয়ই চিকিৎসার জন্য ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হননি। সবটাই ভুয়ো। বিষয়টি বিমা কোম্পানির নজরে আসে। সেইমতো কালীগঞ্জ থানাকে বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকে চিঠি করা হয়। এরপর কালীগঞ্জ থানার পুলিস তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করছে। তদন্তে নার্সিংহোমের এই কীর্তি সামনে এসেছে।
দেখা যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতেই মেডিক্লেম চূড়ান্ত হয়েছে। যদিও ওই স্বাক্ষর সিভিক ভলান্টিয়ারের কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। এর আগে রাজ্যের এক আইপিএসের শাশুড়িকে সিভিক ভলান্টিয়ার দেখিয়ে মেডিক্লেমের মাধ্যমে মোটা টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার(গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পরই, তা কালীগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ক্যাশলেশ মেডিক্লেমের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে রোগীকে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার পর তার সমস্ত খরচ সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির ক্লেম করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সিভিক ভলান্টিয়াররা এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিবারের চিকিৎসার জন্য ক্লেম করতে পারেন। ওই টাকার ভাগ সিভিক ভলেন্টিয়ারদের পকেটেও যাচ্ছে না, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না পুলিস মহলই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা স্বাস্থ্যবিমা’কে ঘুরপথে ‘আমদানি’র রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে এই চক্র। রাজ্য পুলিসের কাছেও পাহাড় প্রমাণ অভিযোগের জমা পড়েছে। এই চক্রের পর্দা ফাঁস করতে তদন্ত করছে সিআইডি।
সেজন্য গত এক বছরে সিভিক ও হোমগার্ডের কারা কারা স্বাস্থ্যবিমার টাকা তুলেছেন, তার পূর্ণাঙ্গ নথি জোগাড় করা হচ্ছে। এই মেডিক্লেম কেলেঙ্কারি সামনে আসায় পুলিস মহলেও ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে।