• রবি ঠাকুরের অঞ্জনা নদী আজ ড্রেনে পরিণত, সংস্কারের দাবি
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: ‘অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনী গাঁয়ে/পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে’— শোনা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি অঞ্জনা নদীর তীরে বসেই লিখেছিলেন। তখন কৃষ্ণনগর শহরের বুক চিরে বইছে অঞ্জনার ধারা। এরপর জল গড়িয়েছে বহুদূর। এক সময়ের নদীয়া জেলার গর্ব অঞ্জনা নদী আজ আর নদী নয়, ড্রেন। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস। সেই দিন আর দেরি নেই, যেদিন শুধু সহজপাঠেই থাকবে অঞ্জনা নদীর নাম। যে অঞ্জনা নদীর বুকে চলত বাংলার বাণিজ্য, আজ সেই নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ বিল্ডিং, ইটভাটা, রাস্তা, বাঁধ দিয়ে চলছে চাষাবাদ। 

    অঞ্জনা নদীটি কৃষ্ণনগরের কাছে রুইপুকুর অঞ্চলে জলঙ্গি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ২৯ কিমি প্রবাহিত হয়ে রানাঘাটের কাছে চূর্ণী নদীতে মিশেছে। সমগ্র নদীটি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অংশ। কৃষ্ণনগর শহরের মধ্যে নদীটি প্রায় ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করে দোগাছি পৌঁছেছে। এই নদীর তীরে কৃষ্ণনগর শহরের ক্যাথিড্রাল চার্চ, বেজিখালি, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, শক্তিনগর হাসপাতাল ইত্যাদি অবস্থিত। বর্তমানে, কৃষ্ণনগরে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত ও অবৈধ নগরায়নের চাপে নদীটি ক্রমশ পলিমাটি, কচুরি পানা, আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

    কৃষ্ণনগর শহরের বেজিখালি, চার্চ, শক্তিনগর সংলগ্ন এলাকায় নদীটির প্রবাহ একবারে থমকে গিয়েছে। এই জায়গাগুলোতে নদীটি কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। নদীতে আবর্জনা, পলিথিন, বর্জ্য পদার্থ, দোকান ও বাড়ির নোংরা জল ফেলা হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে বানানো হয়েছে রাস্তা। কিছু কিছু জায়গায় এমন ভাবে মাটি ভরাট করা হয়েছে যে নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে নদীটি বর্তমানে ড্রেনে রূপান্তরিত হয়েছে।

    নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, অঞ্জনা নদী আজ ড্রেন হয়েছে তার পেছনে মানুষই দায়ী। এই নদীটাকে যদি বাঁচানো না যায়, তাহলে বিপন্ন হবে কৃষ্ণনগর শহর। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী পুনর্গঠন করতে হলে প্রথমেই নদীর দখলমুক্তি, নিকাশি পরিকাঠামোর সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে অঞ্জনা কেবল পাঠ্য বইতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

    শক্তিনগরের অঞ্চলের এক প্রবীণ নাগরিক সুশান্ত ঘোষ বলেন, আগে অঞ্জনা নদীতে নৌকা চলত, সেচের জন্য ব্যবহার হতো নদীর জল। মানুষ স্নান করত। ২০০০ সালের ভয়ংকর বন্যার সময় এই নদীর জন্যই কৃষ্ণনগর শহর রক্ষা পেয়েছিল। এখন সর্বত্র নোংরা, গন্ধ। এটাকে আর নদী বলে বিশ্বাস করা কঠিন। স্থানীয় রুদ্র দাস বলেন, অঞ্জনা যদি আজ নদী হিসেবে থাকত, তাহলে শহরের নিকাশি থেকে সৌন্দর্য এক আলাদা পর্যায়ে চলে যেত। শহরের ভারসাম্য কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্য নষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা সবাই অঞ্জনা নিয়ে ভোটের আগে অনেক কথা বলে, কিন্তু শেষমেশ কিছুই হয় না। অঞ্জনা যদি এখনই দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা হয়, তাহলে শহর কৃষ্ণনগর ভবিষ্যতে আরও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, অঞ্জনা আমাদের শহরের অন্যতম নদী। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমি অবশ্যই সেই সমস্যার সমাধান করব। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)