• বন্দুকের জাল লাইসেন্স বানিয়ে গানম্যানের ডিউটি, বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার ৩
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বন্দুকের জাল লাইসেন্স তৈরি করে এক নামী স্বর্ণ বিপণী সংস্থায় গানম্যানের চাকরি নিয়েছিল তিনজন। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিসের এসটিএফ গ্রেপ্তার করেছে ওই তিনজনকে। তারা ওই জুয়েলারি সংস্থার এজেসি বোস রোডের অফিসে কর্মরত ছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি এসবিবিএল গান, বারো বোরের ১৭টি কার্তুজ। এই স্বর্ণ বিপণীর বিভিন্ন স্টোরে কর্মরত আরও ১৩ জন নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে জাল লাইসেন্স মিলেছে। ওই লাইসেন্সগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। জাল লাইসেন্সের দেখিয়ে কেনা ১১টি বন্দুকও উদ্ধার করা হয়েছে। এইসব লাইসেন্স পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ইস্যু করা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে।

    এসটিএফের কাছে খবর আসে, ভুয়ো লাইসেন্স দেখিয়ে বন্দুক কিনে গানম্যানের চাকরি করছে একাধিক ব্যক্তি। খোঁজ করতে গিয়ে অফিসাররা জানতে পারেন, এগুলি ইস্যু করা হয়েছে দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে। সেখানকার জেলাশাসকদের সই নকল করা হয়েছে। এমনকী, লাইসেন্স তৈরি করার জন্য ভুয়ো ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাল লাইসেন্স করার জন্য ভুয়ো আধার কার্ড পর্যন্ত তৈরি করেছিল অভিযুক্ত গানম্যানরা। তাদের লাইসেন্স নম্বর জোগাড় করে মেলাতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, ওই একই নম্বরে আসল লাইসেন্সও রয়েছে। সেখান থেকে নম্বরগুলি নিয়ে জাল লাইসেন্স তৈরি করা হয়েছে। এর পিছনে একটি চক্র রয়েছে। ওই নম্বরের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা প্রথমে আটজনের খোঁজ পান। জানা যায়, তারা কলকাতার একটি নামী সোনার দোকানে গানম্যানের চাকরি করছে। ওই আটজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। এসটিএফ ওই বিপণীতে গিয়ে দীনেশ মাহালি, রাজু সর্দার ও বিশ্বজিৎ সরকারকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার হয় লাইসেন্স, বন্দুক ও কার্তুজ। তাদের জেরা করে আরও ১৩ জনের নাম পাওয়া যায়। যারা ওই জুয়েলারি দোকানের অন্য আউটলেটে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করছে। তারাও জাল লাইসেন্সের বিনিময়ে বন্দুক কিনেছে। ওইসব আউটলেটে হানা দিয়ে আরও ১৩টি জাল লাইসেন্স ও ১১টি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করে পুলিস।

    এসটিএফ তিন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, তারাই এই ভুয়ো লাইসেন্স বিক্রির চক্র চালায়। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরও অনেকে। এক জায়গায় নয়, ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। সেগুলি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকায়। এই চক্রের লোকজন বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সিতে কর্মরত নিরাপত্তা রক্ষীদের বলত, তারা বন্দুকের লাইসেন্স করে দিতে পারবে। বিভিন্ন জেলার পুলিস সুপার ও জেলাশাসকদের সঙ্গে তাদের পরিচয় রয়েছে। ফলে সহজেই বন্দুকের লাইসেন্স মিলে যাবে। তাদের টোপে পা দিলে প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে নিত তারা। 

    এরপর জেলাশাসক, পুলিস সুপারের সই নকল করে বন্দুকের জাল লাইসেন্স তৈরি করে বিক্রি করা হতো। এই কাগজ নিয়েই অনেকে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান থেকে বন্দুক কিনেছে। দোকানগুলি সেই লাইসেন্স যাচাইয়ের জন্য পুলিসের কাছে না পাঠিয়ে কীভাবে বিক্রি করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোথা থেকে ওই অস্ত্র কেনা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)