• গয়া থেকে ধৃত সুপারি কিলার লালু খান
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়  কলকাতা

    মাথার উপর ঝুলছে ৪০-এর বেশি মামলা। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। কোনওটাই ছোটোখাটো অভিযোগ নয়। কখনও তার ভূমিকা সুপারি কিলারের। কখনও ‘পথের কাঁটা’ সরাতে প্রতিপক্ষকে সরাসরি গুলি করে উড়িয়ে দেওয়া। ‘শার্প শ্যুটার’ হিসেবে প঩শ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে রীতিমতো নামডাক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ডাকাতি। ঝাড়খণ্ড ও বিহারের সুপারি কিলার সাদাব ওরফে লালু খান কলকাতার নারকেলডাঙা এলাকায় এসে কোটি টাকার ডাকাতি করে। এহেন এক কুখ্যাত ডনকে তিন রাজ্যের পুলিস হন্যে হয়ে খুঁজছিল। গত ১১ জুলাই গয়া পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার তাকে কলকাতায় আনা হয়। ধৃতকে জেরা করে কলকাতায় তার নেটওয়ার্কের বিষয়ে জানতে চান গোয়েন্দারা।

    কয়েকমাস আগে নারকেলডাঙা এলাকায় এক ব্যবসায়ীর এক কোটি টাকা ডাকাতি হয়ে যায়। সেই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। তাদের জেরা করেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সাদাব ওরফে লালু খান হল এই ডাকাতির ‘মাস্টারমাইন্ড’। ডাকাতির সময় সে নিজেও সেখানে ছিল। টাকা লুটের পর উধাও হয়ে যায়। তার খোঁজে ঝাড়খণ্ডের চাতরা জেলার প্রতাপপুর থানা এলাকায় পৌঁছে যান কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দারা। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন,  স্থানীয় পুলিসের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে লালু খানের। সে ২০১০ থেকে  খুন, ডাকাতি, তোলাবাজি করে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে তার রয়েছে একটি সুপারি কিলার গ্যাং। খুনের বরাত নিয়ে সে নিজে পৌঁছে যেত স্পটে। নাইন এমএম থেকে গুলি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দিত ‘টার্গেট’। এহেন অপরাধীকে জালে তোলা যে বেশ কঠিন কাজ, বুঝতে পারছিলেন গোয়েন্দারা। ঝাড়খণ্ড ও বিহার পুলিস লালুর গতিবিধির উপর ধারাবাহিক খোঁজখবর রেখে চলছিল। বারবার মোবাইলের সিম ও ডেরা বদলানোয় তার নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে খুঁজে বার করতে বিহার ও ঝাড়খণ্ড পুলিসের যৌথ ‘সিট’ গঠিত হয়। কয়েকদিন আগে তাদের কাছে খবর আসে, লালু তার এক শাগরেদের সঙ্গে ঔরঙ্গাবাদ যাচ্ছে। ডেলোর জঙ্গল দিয়ে তাদের যাওয়ার কথা। সেইমতো গত শুক্রবার ওই এলাকা  ঘিরে ফেলা হয়। লালুর নতুন নম্বর জোগাড় করে ক্রমাগত নজরদারি চালাতে থাকে পুলিস। বাইকের নম্বরও গোয়েন্দাদের হাতে আসে। ওই এলাকায় বাইকটি পৌঁছতেই পথ আটকায় পুলিস। অফিসারদের ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে পাকড়াও করে পুলিস। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, ডঙ্গল, মোবাইল সহ বিভিন্ন সামগ্রী। গ্রেপ্তারির খবর লালবাজারকে জানানো হতেই সক্রিয় হয় তারাও। লালবাজার থেকে গোয়েন্দাদের একটি টিম গয়া যায়। অভিযুক্ত লালু জেরায় জানায়, ২০১৮ থেকে সে জেলে ছিল। ২০২৪ সালে জামিনে ছাড়া পায়। এরপর বিহারের শেরঘাঁটির আদালত চত্বরে তার প্রতিপক্ষ ফোটু খানকে গুলি করে ফায়ারিং করতে করতেই সেখান থেকে পালায়।  বিহার ও ঝাড়খণ্ড পুলিস ধাওয়া করলে সে কলকাতায় আসে। তিলজলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল। সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল কলকাতারই এক শাগরেদ। আরও জানা যায়, কলকাতায় তার একটি টিম রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই সে খবর পায়,  নারকেলডাঙার ওই ছাগল ব্যবসায়ী কোটি টাকা নিয়ে ফিরছেন। সেইমতোই সফল ‘অপারেশন’ চালিয়েছিল লালু খান।
  • Link to this news (বর্তমান)