নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: একযুগ আগে দেগঙ্গার চিত্ত বসু মার্কেটে তৈরি হয়েছিল হিমঘর। কিন্তু, এখনও তা চালু হয়নি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, হিমঘরে আলু বা অন্য সব্জি না থাকলেও মজুত করা হয়েছে রাশি রাশি ঝাঁটা। এই কথা জানাজানি হতেই অবাক সাধারণ মানুষ। কৃষিপ্রধান এলাকার মানুষ চাইছেন, দ্রুত এই হিমঘরটিকে কৃষকদের স্বার্থে চালু করা হোক।
২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির তত্ত্বাবধানে দেগঙ্গায় চিত্ত বসু নামাঙ্কিত বাজারে শিলান্যাস হয় এই হিমঘরের। মহাকরণ থেকে ভার্চুয়ালি এর শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। ৭৫০ মেট্রিক টন সব্জি ও আলু ধারণের ক্ষমতা রয়েছে এই হিমঘরের। কিন্তু, অজ্ঞাত কোনও কারণে হিমঘরটি এখনও চালু হয়নি। স্রেফ দেখভালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে পেল্লায় বাতানুকূল যন্ত্র, অন্যসব দামি দামি সরঞ্জাম। আর দেখা যাচ্ছে, হিমঘরের ভিতরে আলু বা সব্জি নয়, স্তুপাকৃতি করে রাখা হয়েছে প্রচুর ঝাঁটা। রোজই সেখানে এক ব্যবসায়ী ঝাঁটা মজুত করে রাখেন। এক বা দু’দিন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এই ‘ঝাঁটার কারবার’ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সরকারি হিমঘরকে ঝাঁটার গোডাউন বানিয়ে ফেলেছেন এই ব্যবসায়ী। যদিও তিনি এনিয়ে কিছু বলেননি।
নুরনগরের কৃষক সবুজ মণ্ডলের কথায়, দেগঙ্গা, হাড়োয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কৃষিকাজের উপরে নির্ভরশীল। এলাকার বাসিন্দাদের উৎপাদিত ফসল রাখতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে। এই মার্কেটে হিমঘর তৈরি হওয়ায় আমরা কিছুটা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু প্রায় এক যুগ কেটে গেল। এখনও তা চালু হল না। তালাবন্ধ অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে কোটি টাকায় তৈরি হিমঘর। আমুলিয়ার বাসিন্দা সৌমজিৎ দে বলেন, এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। কিন্তু স্রেফ প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে কৃষকদের দূরদূরান্তের হিমঘরে গিয়ে সব্জি বা আলু মজুত করে রাখতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, সরকারি সম্পত্তি মানুষের কাজে লাগুক।
এ নিয়ে নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির এক আধিকারিক পিয়ালী দত্তগুপ্ত বলেন, কিছু আইনি জটিলতার কারণে এটি চালু হয়নি। ক’দিন আগে মার্কেটে কাজের জন্য তালা খোলা হয়েছিল। মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বৃষ্টির কারণে সেখানে ঝাঁটা রাখেন। এনিয়ে দেগঙ্গার সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে হিমঘরের পরিকল্পনা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু এখন সেটি কৃষকদের কাজে লাগছে না। আর ঝাঁটার কপাল ভালো, তাই হিমঘরে থাকতে পারছে।