• পিএফ জমা পড়ছে না ৭০ শতাংশ কর্মীর, রাজ্যে নথিভুক্ত গ্রাহকদের বঞ্চনার ছবি প্রকাশ্যে, দপ্তরের রিপোর্টেই উদ্বেগ
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: সামাজিক সুরক্ষা! সুরক্ষিত ভবিষ্যত! এ সবই যেন আকাশকুসুম কল্পনা। বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গে ইপিএফওতে নথিভুক্ত কোম্পানিগুলির ৭০ শতাংশ কর্মীরই প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে না। গত এক বছর ধরে রাজ্যের গ্রাহকদের বঞ্চনার ছবিতে বদল আসেনি। খোদ কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে এল এই তথ্য। নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীদের পিএফের সুবিধা দিতে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশনে (ইপিএফও) নাম নথিভুক্ত করতে হয় বিভিন্ন কোম্পানিকে। তারপর যে সমস্ত কর্মীরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় পড়েন, তাঁদের মাসমাইনে থেকে নির্ধারিত টাকা কেটে জমা করা হয় পিএফ দপ্তরে। কর্মদাতা সংস্থাও দেয় সমান অঙ্কের অর্থ। কিন্তু গত অর্থবর্ষ, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, এরাজ্যে সেই সংস্থাগুলির প্রায় এক কোটি ‘যোগ্য’ কর্মীই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে সামনে চলে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আসল চেহারা!  

    পশ্চিমবঙ্গে ইপিএফও’র মোট দশটি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। মোট ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বেসরকারি সংস্থা তাদের আওতায়। কোম্পানিগুলিতে চাকরি করেন ১ কোটি ৩৯ লক্ষের বেশি কর্মচারী, যাঁরা পিএফের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৫৫ হাজার সংস্থা নিজেদের কর্মীদের টাকা জমা করেছে ইফিএফওতে। আর সেই সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ৩৯ লক্ষ ৫২ হাজার কর্মচারী। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি কর্মচারীর (শতকরা হিসেবে ৭০ শতাংশের বেশি) পিএফের টাকা হয় দপ্তরে জমা দেয়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থা, অথবা এই সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। দশটি আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি পার্ক স্ট্রিট দপ্তরের। সেখানে পিএফে নথিভুক্ত সংস্থার আওতায় থাকা কর্মীদের মধ্যে মাত্র উনিশ শতাংশের টাকা জমা পড়েছে। এদিক থেকে শীর্ষে রয়েছে দার্জিলিং আঞ্চলিক অফিস। সেখানে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের টাকা জমা পড়ার হার ৪২ শতাংশের বেশি। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আঞ্চলিক অফিসের ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশ।

    পিএফের টাকা জমা পড়ার হার এত কম কেন? দপ্তরের কর্তাদের দাবি, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই পরিস্থিতি এক। সব ক্ষেত্রে যে বেসরকারি সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করছে, তা নয়। বরং বর্তমানে যে সংস্থাগুলি নতুন খুলছে, তাদের নাম কেন্দ্রীয় সরকারের ‘শ্রমসুবিধা’ পোর্টালে চলে আসছে। পিএফ-ইএসআইতেও নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে তারা। অথচ সেখানে কর্মরতরা সেই সুবিধা পাচ্ছে না। কারণ, ২০ জন বা তার বেশি কর্মী কাজ করলে, তবেই সেই সংস্থায় পিএফের সুবিধা দেওয়া বাধ্যতামূলক। নচেৎ নয়। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ কর্মীদের বঞ্চিত করার সংখ্যাও কম নয় বলে স্বীকার করছেন ইপিএফও আধিকারিকরা। তাঁদের সাফ কথা, নইলে পিএফের টাকা জমা না করার হার ৭০ শতাংশে পৌঁছে যেত না! বর্তমানে অবশ্য কোনও সংস্থা এভাবে ফাঁকি দিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজে জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে সদর্থক ফলও মিলছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)