• ধর্ষণের কথা স্বীকার অভিযুক্তের, দাবি পুলিসের, ‘চাপে’ বয়ান বদল নির্যাতিতার বাবার?
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কোল্ড ড্রিঙ্কে মেশানোর জন্য ঘুমের ওষুধ কিনেছিল সে-ই। ঘুমের ওষুধ মেশানো ঠান্ডা পানীয় খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তরুণী। তারপরই ধর্ষণ... পুলিসি জেরার মুখে অবশেষে একথা স্বীকার করল আইআইএম কাণ্ডে ধৃত কর্ণাটকবাসী রাহুল জৈন ওরফে পরমানন্দ ওরফে প্রেমানন্দ মহাবীর টোপ্পান্নাভারই। রবিবার কলকাতা পুলিস সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। তবে ধৃতের বয়ানে এখনও কিছু অসঙ্গতি রয়ে গিয়েছে বলেই সন্দেহ তদন্তকারীদের। দেশের অন্যতম সেরা ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইএমে এমন ঘটনার নিন্দা শুরু হয়েছে সমস্ত মহলে। কোমর বেঁধে তদন্তে নেমেছে হরিদেবপুর থানা। নয় সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছেন কলকাতা পুলিসের দক্ষিণ পশ্চিম ডিভিশনের ডিসি। এমনকী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে লালবাজার চিঠিও পাঠিয়েছে আইআইএম কর্তৃপক্ষকে।

    বর্তমানে পুলিস হেফাজতে রয়েছে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহুল। জেরার মুখে সে স্বীকার করেছে যে, নির্যাতিতাকে অচেতন করার জন্যই ঘুমের ওষুধ নিয়ে এসেছিল। যদিও কাউন্সেলিং করাতে আসা এক মহিলাকে আচমকা অচেতন করার অভিপ্রায় কেন? পুলিসের এই প্রশ্নের কোনও জবাব 

    ধৃত অভিযুক্ত দিচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের দাবি, তরুণী হস্টেলে আসার আগেই কোল্ড ড্রিঙ্ক এবং জলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল রাহুল। ওই পানীয় গ্রহণ করার পর তিনি (নির্যাতিতা) হস্টেলের ১৫১ নম্বর ঘরে চলে যান। তখনই তাঁকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। পুলিস আরও জানতে পেরেছে, ধর্ষণের পর রাহুল ফোন করে গোটা ঘটনা জানায় এক বন্ধুকে। থানা-পুলিস হলে কীভাবে বাঁচা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনাও করে। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে দেখা গিয়েছিল তাকে।

    শুধু ধৃত অভিযুক্ত নয়, নির্যাতিতাকে ঘিরেও নানা প্রশ্ন উঠেছে পুলিসি তদন্তে। বিশেষ করে, তরুণী কি আদৌ সাইকোলজিস্ট? তিনি কি নিয়মিত রোগীদের কাউন্সেলিং করেন? পুলিসের দাবি, নির্যাতিতা কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র দেখাতে পারেননি। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন, তাও বলেননি। এমনকী তাঁর চেম্বার বা প্রেসক্রিপশনের  ব্যাপারেও অন্ধকারে তদন্তকারীরা। তরুণীর আচরণ তাই তাঁদের ভালো ঠেকছে না। সেকারণে তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর।

    পুলিস সূত্রের খবর, অভিযোগ জানানোর পর থেকেই অদ্ভুত আচরণ করছেন তিনি। এমনকী নির্যাতিতার বাবাও ধর্ষণের ঘটনাই অস্বীকার করছেন গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে। এই বয়ান বদলের নেপথ্যে কি অন্য কারও ‘চাপ’ রয়েছে? কে সে? তারা কি অভিযুক্তর পরিবারের কেউ? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। বয়ান বদলের পিছনে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনাও তাঁরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

    পুলিসের হাতে আসা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সকাল সাড়ে বারোটা নাগাদ জোকায় আইআইএমে প্রবেশ করেছিলেন ওই তরুণী। বেরিয়ে যান দুপুর তিনটে দশ নাগাদ। সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি হরিদেবপুর থানায় আসেন অভিযোগ জানাতে।
  • Link to this news (বর্তমান)